পাটাই ষষ্ঠী ব্রত Patai Sosthi Brotokotha
পাটাই ষষ্ঠীরর ব্রতের সময় – পৌষ মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী তিথিতে এই ব্রত পালন করতে হয়।
পাটাই ষষ্ঠী ব্রতের কি কি দ্রব্য লাগে ও তার বিধান -আতপ চালের ৫ খানি নৈবেদ্য, ফল ও মিষ্টান্ন। নৈবেদ্য এর মধ্যে একখানি বাড়ির ধোপা বউয়ের জন্য, একখানা বাড়ির জন্য আর তিনখানা তিনজন এয়োর জন্য।
পৌষ মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠীর দিন , বাড়ির উঠোনে একটা ছোট পুকুর কাটিয়ে তাতে বেনা গাছের পাঠাই পুঁতে পুজোর জায়গা করা হয় ।
পুরহিতকে দিয়ে পূজা করার নিয়ম। পুজোর পর ছেলে মেয়েদের মায়েদের চিঁড়ে দই ফলার করে দিতে হয় ।
পাটাই ষষ্ঠীর ব্রতকথা – এক দেশে এক বিধবা বামনী তার ছেলে আর বউকে নিয়ে বাস করত। বউটি ছিল খুবই ভালো মানুষ। দোষের মধ্যে সে খাবার দাবারের লোভ কিছুতেই সামলাতে পারত না,
এমন কি ঠাকুর দেবতার পূজার জিনিসের মধ্যে লুকিয়ে লুকিয়ে ফলমূল, মিষ্টান্ন সে অনায়াসে খেয়ে ফেলত। সেই পাপের ফলে তার যত ছেলে মেয়ে হয় সবাই মরে যায়।
বামনী একবার ঠিক করলো যে, সেবারের পৌষ মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠীতে সে বউকে দিয়ে পাটাই ষষ্ঠীর ব্রত করাবে। অনেকগুলো কাপড় কেচে আনবার জন্য ষষ্ঠীর ব্রতের দিন বামনী বউকে সকালেই পুকুরঘাটে পাঠিয়ে দিল,
আর নিজে বাড়ির উঠোনে উঠোনে ব্রত করার সব আয়োজন করতে লাগলো। সে একটা ছোট্ট পুকুর কেটে তার পাশে বেনা গাছের পাটাই পুঁতে রোহিত কে পুজোয় বসিয়ে দিল।
বউ কাপড় কাচতে কাচতে চারিদিক থেকে শাঁখের শব্দ শুনতে পেল। তখনি তার মনে পড়ে গেল যে-সেদিন পাটায় ষষ্ঠী ব্রত। সে জানত যে বাড়িতে অনেক ফলমূল আর মিষ্টান্ন আনা হয়েছে।
সে আর লোভ সামলাতে পারল না, ছুটল বাড়ির দিকে কাপড় চোপড় সব ঘাটে ফেলে রেখে। ছুটতে ছুটতে বেনা গাছের পাশ দিয়ে যাবার সময় বেনা গাছে পা আটকে সে পড়ে গিয়ে সঙ্গে সঙ্গে অজ্ঞান হয়ে গেল।
সেই সময় ধোপা তার নৈবেদ্য আর প্রসাদ নিয়ে সেইখানে দিয়ে আসলো। বামুন বউকে সেইখানে অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকতে দেখে সে তখুনি গিয়ে বামনী কে খবর দিলো। বামনী ও খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে ছুটে এলো।
সে বউয়ের মুখে জলের ঝাপটা দিয়ে তার জ্ঞান ফিরিয়ে তাকে বাড়িতে নিয়ে গেল। তারপর বউকে স্নান করিয়ে খুব শুদ্ধাচারে ষষ্ঠীর ব্রত করল।
ব্রতের শেষে বামনী বউকে বলল, ” ভক্তির সঙ্গে মা ষষ্ঠী কে প্রণাম করে বর চেয়ে নাও। এই বলে বর চেয়ে নাও যে, বছরের মধ্যে যেন ছেলের মুখ দেখতে পাই আর যেন আমার কোন দুঃখ কষ্ট না হয়।”
বউকে শাশুড়ির কথামতো বড় চাইল। তাতে মা ষষ্ঠীর দয়া হল তার ওপর, আর বছরের মধ্যে একটি সুন্দর ফুটফুটে ছেলে তার কোলে আলো করে ঘরে এল ।
তারপর থেকে প্রত্যেক বছর তারা পাটায় ষষ্ঠী ব্রত করতে লাগলো। এইভাবে পাটাই ষষ্ঠীর গুনাগুন চারিদিকে আস্তে আস্তে প্রচার হয়ে গেল।
পাটাই ষষ্ঠী ব্রতের ফলাফল – পাটায় ষষ্ঠীর ব্রত করলে গৃহস্থের ছেলে-মেয়ে ও আত্মীয় সজনের অকালে মৃত্যু হয় না।
আরও পড়ুন— ইতুপূজা ব্রতকথা
ভারতশাস্ত্রের সমস্ত আপডেট এখন টেলিগ্রামে (Join Telegram)