সঙ্কট মঙ্গলচণ্ডীর ব্রত: Sankat Mangalchandi Learn

সঙ্কট মঙ্গলচণ্ডীর ব্রত Sankat Mangalchandi

সঙ্কট মঙ্গলচণ্ডীর ব্রত: Sankat Mangalchandi

সঙ্কট মঙ্গলচণ্ডীর ব্রত করার সঠিক সময় বা কাল – আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষের কিংবা অগ্রহায়ণ মাসের শুক্লপক্ষের যে কোনো মঙ্গলবার এই ব্রত নিতে হয়। দু’জন সধবা স্ত্রীলোকের একসঙ্গে এই ব্রত পালন করার নিয়ম।

সঙ্কট মঙ্গলচণ্ডীর ব্রতে কি কি দ্রব্য লাগে ও তার বিধান- দূর্বা, আতপচাল, রেশমী কাপড়ের একটা টুক রো, কলাপাতা ও নিরামিষ তরকারী।

আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষের কিংবা অগ্রহায়ণ মাসের শুক্লপক্ষের যে কোনো মঙ্গলবার, আটগাছা দুর্বা ও আটটি আতপচাল, একটা রেশমী কাপড়ের টুকরোয় বেঁধে অর্ঘ্যতৈরি করে রাখতে হবে।

তারপর নিজে কুটনো কুটে আর বাটনা বেটে রান্না করবে। দু’জন সধবা স্ত্রীলোককে একসঙ্গে এই ব্রত পালন করতে হয়। দুজনে একসঙ্গেই কুটনো বাটনা করে নিয়ে নিরামিষ তরকারী রান্না করে একসঙ্গে খেতে বসবে।

খাওয়ার শেষে ভাতের সঙ্গে দই মেখে নেওয়া প্রয়োজন। খেতে বসে কোনো কথা বলা চলবে না। এবং বা হাত, দুই হাটুর ভেতর রাখার নিয়ম।

খাওয়া শেষ হয়ে গেলে দুজনেই দু’জনকে জিজ্ঞাসা করবে, “সঙ্কট থেকে উঠবো কী?” দুজনেই দু’জনকে বলবে, “হ্যাঁ ওঠো।” খাওয়ার পর পাতা জলে ভাসিয়ে দিয়ে, নিজের হাতে এঁটো জায়গাটি পরিষ্কার করে নিতে হবে।

ব্রতকথা–চন্দ্ৰপতি নামে এক সওদাগর উজানীতে বাস করতেন। চন্দ্রপতি সওদাগর একবার বাণিজ্যে বেরিয়ে বহুদিন ধরে বাড়িতে না ফিরে প্রায় নিরুদ্দেশ হয়ে গিয়েছিলেন।

বাড়িতে তাঁর সতীসাধ্বী স্ত্রী তার স্বামীর কোনো খবর না পাওয়ার দরুণ খুবই চিন্তা ভাবনা আর মনোকষ্টে দিন কাটাচ্ছিল। সতীর এই মনোকষ্ট দেখে মা ভবানীর তার ওপর দয়া হল।

মা তখন এক বুড়ী ব্রাহ্মণীর বেশ ধরে সওদাগরের স্ত্রীর কাছে এসে বললেন, “মা, তুমি এমন মনোকষ্টে দিন কাটাচ্ছো কেন?” সাধ্বী তখন বলল, “মা! আমার স্বামী আজ অনেক দিন থেকে নিরুদ্দেশ হয়ে আছেন, তাঁর কোনো খবরই পাচ্ছি না। অনেক সহ্য করেছি, আর আমি পারছি না।ভাবছি আত্মহত্যা করে এই যন্ত্রণা থেকে নিষ্কৃতি পাবো।”

মা ভবানী বললেন, “আত্মহত্যা করবার দরকার নেই। তুমি এক কাজ কর মা। সঙ্কট মঙ্গলবারের ব্রত কর। এই ব্রত করলে, তোমার স্বামী শিগগিরই বাড়িতে ফিরে আসবেন। আমি ব্রতের সব নিয়ম বলে দিচ্ছি, সেইভাবে তুমি ব্রত কর, তোমার মনস্কামনা নিশ্চয়ই পূর্ণ হবে।”

এই কথা বলে ব্রাহ্মণী ব্রতের সব নিয়ম সাধ্বীকে বলে দিয়ে চলে গেলেন। ব্রাহ্মণীর কথামত সাধ্বী পাড়ারই তার অন্তরঙ্গ একজন সধবাকে ডেকে এনে, একসঙ্গে দু’জনে এই ব্রত করল আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষের একটা মঙ্গলবারে।

ব্রতের পরে দু’জনে যখন খেতে বসেছে, সেই সময় তার দাসী এসে খবর দিল যে, কর্তা বাড়ি আসছেন।এই কথা শুনে সাধ্বীর আর আনন্দ ধরে না, সে খাওয়া শেষ হবার আগেই তাড়াতাড়ি উঠে স্বামীর সঙ্গে দেখা করতে ছুটে গেল।

ইতিমধ্যে দাসী দেখল যে, ভাত-তরকারী সবই পড়ে আছে। দাসী সেগুলো খেয়ে নিল আর এঁটো তুলে পাতাগুলো জলে ভাসিয়ে দিয়ে কর্তাকে দেখতে গেল।

কর্তা বাড়ি ঢুকেই দাসীকে দেখতে পেলেন এবং তাকেই নিজের স্ত্রী ভেবে সব জিনিসপত্তর, সোনা দানা, তারই হাতে তুলে দিলেন। নিজের স্ত্রীর দিকে ফিরেও চাইলেন না—দাসীকেই স্ত্রী ভেবে নিয়ে তার সঙ্গেই ঘর করতে লাগলেন।

এদিকে তাঁর সাধ্বী স্ত্রীর আবার আগের মত দুরবস্থা হল। সে আবার দুঃখে পড়ে কেঁদে কেঁদে দিন কাটতে লাগল। সাধ্বীর এই রকম অবস্থা দেখে মা ভবানীর আবার দয়া হল।

তিনি সেই বুড়ী ব্রাহ্মণীর বেশে আবার সাধ্বীর কাছে দেখা দিয়ে বললেন, “মা, ব্রতের নিয়ম বলবার সময়ে আমি তো তোমাকে বলেছিলাম যে, খেতে খেতে উঠতে নেই। খাওয়ার শেষে পাতাগুলো জলে ভাসিয়ে দিতে হয়।

কিন্তু তুমি তো সে সব নিয়ম পালন কর নি মা। স্বামী এসেছে শুনে তুমি খাওয়া শেষ না করেই উঠে পড়েছিলে, তাতেই ব্রতের নিয়ম ভঙ্গ হয়েছে। তোমার দুঃখ আমি আর দেখতে পারছি না তাই দেখা দিলাম। তুমি আবার অগ্রহায়ণ মাসের শুক্লপক্ষের মঙ্গলবারে ব্রত কর।

ঠিক ঠিক সব নিয়ম পালন করলে তোমার আর মনোকষ্ট থাকবে না—স্বামীকেও ফিরে পাবে।” এই কথা বলে। ব্রাহ্মণী চলে গেলেন। সওদাগরের স্ত্রী ব্রাহ্মণীর কথা অনুসারে অগ্রহায়ণ মাসে আবার ব্রত করে সমস্ত নিয়ম ঠিক ভাবে পালন করল।

তার ফলে সে আবার তার স্বামীর ভালবাসা ফিরে পেল এবং বেশ আনন্দের সঙ্গে ঘর করতে লাগল। মা মঙ্গলচণ্ডীর দয়ায় তারা স্বামী-স্ত্রী খুব সুখে দিন কাটাতে লাগল। এইভাবে চারিদিকে সঙ্কট মঙ্গলবারের ব্রতের কথা প্রচার হল। ব্রতের ফল—এই ব্রত পালনের ফলে সমস্ত রকম বিপদ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়।

 

পড়তে থাকুন – কুলুই মঙ্গল চণ্ডীর ব্রত : Mangalchandi Bratakatha

ভারতশাস্ত্র এর সমস্ত আপডেট এখন টেলিগ্রামে পেয়ে যাবেন (Join Telegram)

 

 

Scroll to Top
Saraswati Puja top 5 Mantra Durga puja 2023 full panchang Top 5 Chants of Maa Durga Top 5 Ganesh Mantra for Ganesh Chaturthi Radha Krishna: দেখুন শ্রী রাধা কৃষ্ণের অপূর্ব রূপ