মা মনসা ব্রতকথা : Manasa Bratakatha

Manasa Bratakatha

মা মনসা ব্রত কথা : Manasa Bratakatha

শ্রাবণ ও ভাদ্র মাসে শনি ও মঙ্গলবারে মনসা পুজো করার নিয়ম। একটি মনসা গাছ, নৈবেদ্য ৮টি, কলা আর দুধ। মনসা পুজোয় ধূপ দেওয়া নিষেধ।

মা মনসা ব্রতের ব্রতকথা—এক দেশে এক গরীব ব্রাহ্মণ বাস করত। তার সাতটি মেয়ে হয়েছিল, কিন্তু ছেলে একটিও হয়নি। সে ঠিক সময় মতো ছ’টি মেয়ের বিয়ে দিয়ে দিল, কিন্তু তার ছোটমেয়ে সরলার বর আর কিছুতেই জুটলো না।

ব্রাহ্মণ চারিদিকে সরলার জন্যে বর খুঁজতে লাগল, শেষে তাদের গ্রাম থেকে কিছু দূরের গ্রামে এক ব্রাহ্মণের খবর পেয়ে সরলার বাবা সেই ব্রাহ্মণের বাড়ি গেল। সেই ব্রাহ্মণের এগারোটি ছেলে ছিল।

সে দশটি ছেলের বিয়ে খুব বড়লোকের বাড়িতে দিয়ে দশটি বৌ এনেছিলো। কিন্তু বড়লোকের মেয়েরা শ্বশুরকে মোটেই যত্ন করত না, সেই জন্যে সে তার ছোটছেলের বিয়ে দিয়ে একটি গরীবের মেয়ে আনবার জন্যে খোঁজাখুঁজি করছিল।

সে সরলার বাবার কাছে সরলার কথা শুনে সরলার সঙ্গেই তার ছোটছেলের বিয়ে দিল। সরলা শ্বশুরবাড়িতে এল, কিন্তু শাশুড়ী আর জায়েরা তাকে দেখে ঘেন্না করতে লাগল। একমাত্র শ্বশুর ছাড়া সরলাকে কেউ ভাল চোখে দেখতে পারতো না।

তার জন্যে সরলার মনে খুবই কষ্ট ছিল। সে ভাবতো যে, গরীবের মেয়েরা বেঁচে থাকে কেন! জন্মাবার সঙ্গে সঙ্গে মরে গেলেই তো আর তাকে এমন কষ্ট সহ্য করতে হয় না। সরলার দিন খুব দুঃখেই কাটতে লাগল। এমনি একদিন, বেশ ঝিরঝিরে জল ঝড় হচ্ছিল।

সরলার জায়েরা অন্য এক জায়গায় দল বেঁধে বসে সেই দিন কী খেলে ভাল লাগবে তাই নিয়ে আলোচনা করছিল। কেউ পোলাওয়ের কথা বললে, কেউ বলল ভূনি খিচুড়ি, আবার কেউ বলল যে, এটা তেলেভাজা খাবারই দিন।

এমন সময় সরলা সেদিকে আসতে অন্য বউয়েরা তাকে বলল, “আচ্ছা ছোটবউ! আজকের দিনে কী খেতে ভাল লাগে বলত?” সরলা তো ছিল গরীবের মেয়ে, সে তার পছন্দ মতো বলল, “মাছের টক আর পান্তা ভাত।”

অন্য বউয়েরা হো হো করে হেসে উঠে তাকে খুব ঠাট্টা করতে লাগল। তার পর একটু বেলা হতে সকলে পুকুরে স্নান করতে গেল, সরলাও গেল তাদের সঙ্গে।

পুকুর ঘাটে সরলা দেখল যে, কতকগুলো ছোট ছোট মাছ কিলবিল করে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সে তার গামছা পেতে মাছগুলোকে ধরে নিল।

তাই দেখে তার জায়েরা আবার খুব ঠাট্টা করে বলল, “ওই দ্যাখো, ছোটবউ মাছের টকের ব্যবস্থা করে ফেলেছে আর পান্তা ভাতও ঘরে আছে, ওর আর কোনো ভাবনাই রইল না।” পুকুর ঘাট থেকে এসে সরলা একটা ছোট হাঁড়ির মধ্যে মাছগুলোকে জিইয়ে রাখল।

কিন্তু কিছুক্ষণ পরে দেখল যে সেগুলো মাছ নয়, সব সাপের বাচ্চা। সরলা কারুকে কিছু না বলে সাপের বাচ্চাগুলোকে দুধ কলা দিয়ে পুষতে লাগল। সাপগুলো ছিল মা মনসার ছেলে তারা একটু বড়ো হতেই মা মনসার কাছে স্বর্গে চলে গেল।

তারা, তাদের মাকে সরলার দুর্দশার কথা সব জানাল। সব শুনে মা মনসার মনে খুব কষ্ট হল। তিনি এক বুড়ী ব্রাহ্মণীর বেশ ধরে সরলাদের বাড়িতে এসে নিজেকে তার মাসী বলে পরিচয় দিয়ে সরলাকে দিন কয়েকের জন্যে নিয়ে যেতে চাইলেন।

শ্বশুরবাড়ির লোকেরা কোনো আপত্তি না করে সরলাকে সেই বুড়ী ব্রাহ্মণীর সঙ্গে পাঠিয়ে দিল। বুড়ী ব্রাহ্মণী তখন সরলাকে নিয়ে এক নির্জন বনের মধ্যে গিয়ে উপস্থিত হলেন।

তিনি সরলাকে বললেন, “মা! তুমি চোখ বুজে থাকো, আমি না বললে চোখ খুলো না।” সরলা তার কথা মত চোখ বুজে রইল। এমনি সময় স্বর্গ থেকে এলো পুষ্পক রথ। মা মনসা সরলাকে সঙ্গে নিয়ে সেই রথে উঠলেন।

অল্পক্ষণের মধ্যে সেই রথ স্বর্গে যা মনসার প্রাসাদে গিয়ে পৌঁছালো। সরলা সেখানে গিয়ে দেখল চারিদিকে সাপ কিলবিল করছে, ছোটাছুটি করছে, কিন্তু কেউ তাকে কামড়াচ্ছে না। মনসা দেবী তখন সরলাকে বললেন, “মা সরলা।

আমি তোমার মাসী নই, আমি মনসা দেবী—তোমার দুঃখ দেখে তোমাকে এখানে এনেছি। তুমি এখানে থাক, আজ থেকে আমার পুজোর যোগাড় কর, আর তোমার ওই ছোট ছোট ভাইয়ের—আমার ছেলেদের একবাটি করে দুধ গরম করে খেতে দিও।

আর একটা কথা জেনে রাখো যে, ওই দক্ষিণ দিকটায় কখনো যেও না।” সরলা মা মনসা সব কথা মেনে নিল। স্বর্গে সরলার দিন বেশ আনন্দে কাটছিলো। হঠাৎ একদিন মা মনসার বারণ দক্ষিণ দিকটা তার দেখবার ইচ্ছে হল।

যে দক্ষিণ দিকে গিয়ে দেখল যে, মা মনসা নাচছেন। নাচ দেখতে দেখতে সরলা ছোট ভাইদের জন্যে দুধ গরম করার কথা একেবারে ভুলে গিয়েছিল, হঠাৎ মনে পড়ায় ছুটে এসে দুধ গরম করে রাখল।

এর কিছু পরেই তার সাপ-ভাইয়েরা দুখ খেতে এল, কিন্তু দুধ তখনও জুড়োয়নি, গরম দুধ খেয়ে তাদের মুখ পুড়ে গেল। তারা সবাই সঙ্গে সঙ্গে গিয়ে মাকে সব জানাল আর বলল যে, ওকে আজ ছোবল মেরে মেরে ফেলবো।

কিন্তু মা মনসা বললেন, “না তা হবে না, বরং ওকে এক গা গয়না পরিয়ে ওর শ্বশুরবাড়িতে রেখো এসো।” শেষে তাই হল, সরলাকে এক গা গয়না পরিয়ে তাকে তার সাপ-ভাইয়েরা তার শ্বশুরবাড়িতে নিয়ে এল।

সরলার গায়ে এক গা গয়না দেখে তার জায়েরা আবার খুব ঠাট্টা করে বলল, এক গা গয়না পরে কত ঢং দেখ।” সরলা তখন বলল, “ষাট! ষাট! বেঁচে থাক আমার আরোল, পারোল, ঢোঁড়া, বোড়া, কেউটে আমার সাপ ভাইয়েরা, আমার আবার গয়নার অভাব!”

তখনও সরলার সাপ-ভাইয়েরা তাকে পৌঁছে দিয়ে বাড়ি ফেরেনি, আশপাশেই ছিল।

তারা সরলার কথা শুনে স্বর্গে গিয়ে তাদের মাকে সব বলল। সব কথা শুনে মা মনসা আবার সরলাদের বাড়িতে এলেন আর যেখানে যা সাজে সেই ভাবে সরলাকে আরও গয়না পরিয়ে দিয়ে বললেন, “মা! তুমি পৃথিবীতে এখন থেকেই আমার পুজোর প্রচলন কর।

আমি বাস করবো ফণী মনসা গাছে। দশহরা আর নাগ পঞ্চমীর দিন, এই গাছের ডাল এনে বাড়িতে পুজো করো। প্রত্যেক বছর ভাদ্র মাসের শনি ও মঙ্গলবারে আমার পুজো করে পান্তা ভাত ভোগ দিয়ো, তাহলে কখনও সাপের ভয় থাকবে না।” এই কথা বলে মা মনসা অদৃশ্য হলেন। সেই থেকে দেশে দেশে মা মনসার পুজোর প্রচার হল।

ব্রতের ফল—শ্রাবণ ও ভাদ্র মাসে মনসা পুজো করলে বাড়িতে কখনো সাপে কামড়ানোর ভয় থাকে না।

 

পড়ুন – শ্রাবন মাসের ব্রতকথা

ভারতশাস্ত্র এর সমস্ত আপডেট এখন টেলিগ্রামে পেয়ে যাবেন (Join Telegram)

Scroll to Top
Saraswati Puja top 5 Mantra Durga puja 2023 full panchang Top 5 Chants of Maa Durga Top 5 Ganesh Mantra for Ganesh Chaturthi Radha Krishna: দেখুন শ্রী রাধা কৃষ্ণের অপূর্ব রূপ