পৌষ মাসের লক্ষ্মীপূজা ব্রত

পৌষ মাসের লক্ষ্মীপূজা ব্রত | Lakshmipuja Vratkatha

সময় বা কাল – পৌষ মাসের শুক্লপক্ষের বৃহস্পতিবার বাড়িতে আলপনা দিয়ে লক্ষ্মীপুজো করার নিয়ম।

ব্রতের দ্রব্য ও বিধান – ঘট, গঙ্গাজল, আমের ডাল, ডাব, সিঁদূর, পান, সুপুরি, আতপচাল, ৪টি নৈবেদ্য (একটি পাত্রে লক্ষ্মীর, বিষ্ণুর, কুবেরের আর ইন্দ্রের ৪টি নৈবেদ্য করতে হবে), মিষ্টি ও ফল। পৌষ মাসের শুক্লপক্ষের বৃহস্পতিবার বাড়িতে বেশ ভালো করে আলপনা দিয়ে লক্ষ্মী পুজো করতে হয়। পুরোহিতকে দিয়ে পুজো করিয়ে ব্রতকথা শুনতে হয় ও তারপরে প্রসাদ গ্রহণ করতে হয়। বাড়ির যে কোনো একজনকে এই পুজোর জন্যে উপোস করে থাকার নিয়ম।

ব্রতকথা (Lakshmipuja Vratkatha) – এক দেশে এক গরীব বিধবা বামনী থাকত-তার একটি ছেলে ও একেটি মেয়ে ছিল। বামনীর ভাইয়ের সংসার কিন্তু খুব স্বচ্ছল ছিল, তাদের কোনো অভাব ছিল না। বামনীর তেমন ইচ্ছে না থাকলেও পেটের জ্বালায় সে তার ছেলে আর মেয়েকে নিয়ে ভাইয়ের বাড়ি গেল।

ননদকে ও তার ছেলে-মেয়েদের ‘দেখে ভাজ তখন মনে মনে তাদের ওপর খুব অসন্তুষ্ট হল। বলল, “হ্যাঁগো, তোমার একি আক্কেল বলতো, পৌষ মাসে লোকে রাজ্য পেলেও বাড়ির বার হয় না; তুমি আজ বাড়ী থেকে বেরুলে কী করে?”

বামনী সরল মনে খুব নরম হয়ে বলল, “বৌদি! ছেলে-মেয়েরা বললে যে মা, চলো আজ মামার বাড়ি গিয়ে দু’টি ভাত খেয়ে আসি-“ভাজ অমনি বলে উঠলো, “সে কী গো, তোমার ভাই যে আজ বাড়িতে নেই, তোমাদের কী করে খাওয়াবো বল? ঘরেও খাওয়াবার মত তেমন কিছুই নেই।”

বামনী বলল, “ক’দিন ধরে আমরা আধবেলা খাচ্ছি বৌদি, আজ তাও জুটলো না। কী করি বল, তোমায় আজ চারটি খেতে দিতেই হবে।” এই বলে বামনী খুব খোসামোদ করতে লাগল তার ভাজকে। তখন তার ভাজ দু’টি ক্ষুদ দিয়ে বলল, “এই নাও ভাই-এই ক্ষুদ দিয়েই যা হোক করে চালাও।”

বামনী তখন দেখল যে, ভাইয়ের রান্নঘরের চালে বেশ লাউ হয়েছে, সে তখন খাবার জন্যে দু’-চারটি লাউপাতা চাইল। ভাজ বলল, “খেপেছো, ওই পাতা দিলে তোমার ভাই এসে আমায় আস্ত রাখবে ভাবছো, মোটেই নয়। ও পাতা আমি দিতে পারবো না।”

বামনী তখুনি ছেলে আর মেয়েকে নিয়ে ফিরে যাচ্ছিল। ভাজ বললে, “চলেই না হয় যাচ্ছো, আমার মাথার দুটো পাকা চুল তুলে দিয়ে যাও দিকিন।” বামনী বলল, “সেকি বৌদি! আজকে লক্ষ্মীবার, লক্ষ্মীবারে কি চুল তুলতে আছে?” ভাজ তখন বলল, “লক্ষ্মীবারে চুল তুলতে নেই নাকি, আর আমি যে লক্ষ্মীবারে তোমাদের ক্ষুদ দিলুম, দিয়ে দাও সব ক্ষুদ।” এই কথা বলে ভাজ সমস্ত ক্ষুদ কেড়ে নিল।

বামনী তখন ক্ষুদগুলোও খেতে পেল না দেখে, ছেলে-মেয়ের হাত ধরে কাঁদতে কাঁদতে ভাজের বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল। বাইরে বেরিয়ে বামনী প্রতিজ্ঞা করল যে, আজ শুক্লপক্ষের বৃহস্পতিবার লক্ষ্মীবার, মালক্ষ্মীর নাম করে রাস্তায় যা কুড়িয়ে পাবো তাই রান্না করে ছেলেদের খাওয়াবো।

খানিকটা পথ যাবার পরই বামনী রাস্তায় একটা মরা কেউটে সাপ পড়ে আছে দেখতে পেয়ে, সেইটাকেই কুড়িয়ে নিয়ে বলল, “আজ মালক্ষ্মী যা মিলিয়ে দিয়েছেন তাই আমরা খাবো।” সাপটা নিয়ে এসে বামনী রাঁধতে লাগল। কিন্তু কী আশ্চর্য, সে যতই জ্বাল দেয়, তা থেকে ততই সোনার ফেনা বেরুতে থাকে। বামনী খুব অবাক হয়ে মালক্ষ্মীকে বার বার নমস্কার করতে লাগল।

শেষে খানিকটা সোনার ফেনা, তার ছেলেকে দিয়ে বাজারে বেচতে পাঠাল। সোনার ফেনা বেচে ছেলে বেশ কিছু টাকা পেল আর সেই টাকায় চাল, ডাল, তরকারী, দই, সন্দেশ কিনে আনলো। বামনী তখন মালক্ষ্মীর পুজো করে তারপর জল খেল। বাকী সোনার ফেনা বিক্রি করে বামনী বিস্তর টাকা পেল আর সেই টাকায় সে সোনার আর হীরের গহনা গড়াল আর একটা খুব বড় বাড়ি তৈরী করল।

বামনীর ভাজ একদিন সকাল বেলা উঠে দেখল যে, বামনীর কুঁড়ে চালা যেখানে ছিল সেটা আর নেই, সেখানে এখন মস্তবড় বাড়ি উঠেছে। বামনীর এই অবস্থা কী করে হল জানবার জন্যে তার ভাজ ওদের সবাইকে নেমন্তন্ন করে পাঠাল। বামনীর তখন ছেলের বিয়েও হয়ে গেছে। সে তার ছেলের বৌ আর মেয়েকে নানা রকম গয়না পরিয়ে খুব সাজিয়ে পাল্কী করে ভাজের বাড়িতে এসে পৌঁছল।

তাদের এই ভাবে আসতে দেখে ভাজ ত অবাক। সে দেখল, ছেলের বৌ আর মেয়ের গায়ে কতো হীরে-জহরতের গয়না। সে তখন খুব আদর-যত্ন করে মাছ-মাংস ও নানা রকমের তরকারী সাজিয়ে তাদের খেতে বসালো। এইবার বামনীর ছেলের বৌ আর তার মেয়ে তাদের সব গয়না-গাঁটি খুলে আসনের ওপর রেখে খাবার তুলে তুলে বলতে লাগল “আমার হার খাও, আমার বালা খাও, আমার তাগা খাও।

আজ তোমাদের জন্যেই আমাদের নেমন্তন্ন হয়েছে, তোমরাই ভাল করে খাও।” ভাজ তখন বামনীকে জিজ্ঞেস করল যে, এটা কী ব্যাপার? তখন বামনী বলল, “বৌদি! একদিন তোমার বাড়িতে দু’টি খেতে চেয়েছিলুম, সেদিন তুমি কিছুই খেতে দাওনি-আমরা তখন গরীব ছিলুম তাই।

কিন্তু আজকের এই নেমন্তন্ন তো ধন-দৌলতের নেমন্তন্ন, সেই জন্যে ওরা ওদের গয়না-গাঁটিকে নেমন্তন্ন খাওয়াচ্ছে-এ ওদের নেমন্তন্ন তো নয়।” ভাজ তখন নিজের সেই ব্যবহারের জন্যে ননদের কাছে লজ্জায় ক্ষমা চেয়ে নিল। কিছুদিন খুব সুখভোগ করে বামনী তার ছেলের বৌ আর মেয়েকে, পৌষ মাসের লক্ষ্মী পুজোর (Lakshmipuja Vratkatha) ব্রত করার সব নিয়ম শিখিয়ে দিয়ে স্বর্গে চলে গেল।

পৌষ মাসের লক্ষ্মীপূজা ব্রতের ফল (Lakshmipuja Vratkatha) -পৌষ মাসে লক্ষ্মীপুজো করলে ঘরে সোনা, দানা, হীরে, মোহরের অভাব থাকে না এবং যশ, মান প্রতিপত্তি অনেক বেড়ে যায়।

আমাদের এই পোস্ট টি ভাল লাগলে অন্যদেরকে শেয়ার করতে পারেন। আমরা সম্পূর্ণ ফ্রী তে হিন্দু ধর্মের মন্ত্র স্তোত্রম ব্রতকথা ইত্যাদি হিন্দু ধর্মের পূজা অর্চনা শেখানোর চেষ্টা করছি। আপনি খুশি হয়ে আমাদের কে কিছু অর্থনৈতিক সাহায্য করলে আমরা আপনার কাছে বাধিত থাকিব। অর্থনৈতিক সাহায্য করতে এখানে ক্লিক করুন।

আরও পড়ুন – সকল দেব দেবীর গায়ত্রী মন্ত্র

Join Bharatsastra Telegram channelJoin Whatsapp bharatsastra

WhatsApp Channel Join Now
Telegram Channel Join Now

Leave a Comment