শীতল ষষ্ঠীর ব্রত Sital Sosthi Brotokotha
শীতল ষষ্ঠীর ব্রতের সময়- মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী তিথিতে অর্থাৎ সরস্বতী পূজার পরেরদিন, সকল মেয়েদের এই শীতল ষষ্ঠী ব্রত পালন করার নিয়ম।
শীতল ষষ্ঠীর ব্রতের দ্রব্য ও বিধান- দই, হলুদ, কড়াই, ফল ,মিষ্টান্ন ইত্যাদি পুজোয় প্রয়োজন হয়। দই ও হলুদে সাদা সুতো ছুটিয়ে ছেলে – মেয়েদের হাতে বেঁধে দিতে হয়।
আগের দিনে ভাত আর গোটা সেদ্ধ করে রেখে দিয়ে ষষ্ঠী পুজোর দিন সেই ভাত আর গোটা সেদ্ধ খাওয়ার নিয়ম।
শীতল ষষ্ঠী ব্রত কথা-কোন এক দেশে এক বুড়ো বামুন ও তার স্ত্রী বাস করত। বামুনের স্ত্রীর নাম ছিল বিন্দি ঠাকরুণ। বিন্দি ঠাকরুনের ঠাকুর দেবতার উপর খুব নিষ্ঠা ছিল। সে ছেলে, বউ নাতি- নাতনীদের নিয়ে খুব আনন্দের দিন কাটছিল।
Sponsred – মেয়েদের ব্রতকথা (Price – ₹150.00)
একদিন মাঘ মাসের শীতল ষষ্ঠীর দিন খুব ঠান্ডা পড়েছিল। তো সেইদিন বিন্দি ঠাকরুণ শীতে কাতর হয়ে ব্রত করতে পারলো না। সে বেশ করে লেপ চাপা দিয়ে বিছানায় শুয়ে রইলো।
বিন্দি ঠাকুরাণী কে তার নাতি নাতনি বউ মারা সবাই ডেকে ডেকে ব্রতের কথা স্মরণ করাতে লাগল। তিনি দাও বিছানা আর লেপ ছেড়ে উঠলেন না বরং বললেন ,”আমি শীতে আর উঠতে পারছি, না যা করার তোমরা করো।
আর বৌমাদের বললেন আমার জন্য একটু গরম ভাত রান্না করো আর সান করার জন্য গরম জল করো । এই শীতে শীতল ষষ্ঠী ব্রত কি করে করব?” বউয়েরা তাদের শ্বাশুড়ীর কথামত কাজ করলো।
বিন্দি ঠাকুরণ গরম জলে স্নান করল ও গরম ভাত খেলো, অথচ এইদিন ঘরে উনুন জ্বালাতে নেই। তারই একটু পরে খবর এলো যে তার ঘর আগুন ধরেছে আর তার মেয়ে জামাই পুড়ে মারা গেছে।
মেয়ে-জামাইয়ের শোকে বিন্দি ঠাকুরানী হাউ হাউ করে কাঁদতে লাগলো। রাত্রিরে সে কিছুতেই ঘুমোতে না পেরে জেগে বসে রইল।
তারই মধ্যে শুনতে পেল কে যেন বলছে,”তোর বড় অহংকার হয়েছে, তাকে সেই অবজ্ঞা করার পাপেই আজ তোর এই দুর্দশা। তাকে যেমন অবহেলা করেছিস, তেমনি এখন তার ফল ভোগ কর”।
এই কথা শুনে বিন্দি ঠাকুরণ কাঁদতে কাঁদতে মা ষষ্ঠীর কাছে বারবার ক্ষমা চাইতে লাগল – বলল ,”দোহাই মা ষষ্ঠী ,এ বারে আমায় ক্ষমা করো মা , এমন কাজ
আমি আর কখনো করবো না।”বিন্দি ঠাকুরুণ অনেক কাকুতি-মিনতি করাতে তার ওপর মা ষষ্ঠীর দয়া হল। মা ষষ্ঠীর তখন বললেন, “তুই এক্ষুনি মানত কর যে সামনের বছর মাঘ মাসের শুক্লা ষষ্ঠীর
দিনে তোর মেয়ে জামাইয়ের কল্যাণের জন্য উপোস করবি, আর আমার পুজো দিবি-জীবনে আর কখনো এমন দুর্বুদ্ধি করবি না। তোর মেয়ে জামাইকে এখনো দাহ করা হয়নি।
যারা মৃতদেহ নিয়ে যাচ্ছিল-আমার ইচ্ছায় ভয় পেয়ে তারা বনের ধারে মৃতদেহ ফেলে সবাই পালিয়ে গেছে। তুই আমার পুজো করে ঘরের জল আর নির্মাল্য নিয়ে, লোকজন
ওঠার আগেই ভোরবেলা সেই বনের ধারে গিয়ে আমার নাম করে মৃতদেহের উপর জল ছিটিয়ে নির্মাল্য ছড়িয়ে দিবে, তাহলে ই তোর মেয়ে জামাই বেঁচে উঠবে।”
বিন্দি ঠাকুরণ মা ষষ্ঠীর আদেশ মত সকাল হতেই, বনের ধারে গিয়ে তার মেয়ে জামাই এর মৃতদেহ দেখতে পেল। তাদের ওপর ফুল জল ছড়াতেই, তারা বেছে উঠে বিন্দি ঠাকুরন কে প্রণাম করলো।
বিন্দি ঠাকুরণ এই দেখে খুব আনন্দ পেল। সে তাদেরকে নিজের বাড়িতে সঙ্গে করে নিয়ে এল।
পরের বছরে আবার বিন্দি ঠাকুরণ, মাঘ মাসের শুক্ল পক্ষের ষষ্ঠীর দিন উপোস করে মেয়ে-জামাইয়ের মঙ্গলের জন্য শীতল ষষ্ঠী পুজো দিল। বামনির মেয়ে জামাইকে বেঁচে উঠতে দেখার পর থেকে সকলেই শীতল ষষ্ঠী ব্রত পালন করতে লাগলো।
শীতল ষষ্ঠী ব্রতের ফল- মাঘ মাসে শুক্লপক্ষে শীতল ষষ্ঠী ব্রত পালন করলে সংসারের মধ্যে থেকেও শোক তাপ পেতে হয় না।।
আরও পড়ুন— পাটাই ষষ্ঠীর ব্রতকথা
ভারতশাস্ত্রের সমস্ত আপডেট এখন টেলিগ্রামে (Join Telegram)