দুর্গাষষ্ঠী ব্রত | Durga Sasthi Vrat Katha
সময় বা কাল—
আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠীর দিন অর্থাৎ যে শুক্ল অক্ষে ষষ্ঠী তিথি তে বোধন হয় সসেই তিথিতে সমস্ত রমণীরা এই ব্রত পালন করবেন।
দুর্গাষষ্ঠী ব্রতের দ্রব্য ও বিধান—
ফুল, দূর্বা, ধূপ, দীপ, আতপচালের নৈবেদ্য, ফল, মিষ্টান্ন ইত্যাদি। আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠীর দিন, সন্তানের মায়েরা, দিনের বেলা উপোস করে থেকে ষষ্ঠীর পুজো করে, ষষ্ঠী পূজোর প্রসাদ খাবে। ওই যষ্ঠীর পূজোর ব্রত করে সেদিন ভাত খাওয়া বারণ, রাত্তিরে ফল-মূল খেয়ে থাকতে হবে আর আহারের আগে ষষ্ঠীর ব্রতকথা শুনবে।
দুর্গাষষ্ঠী ব্রতকথা | Durga Sasthi Vrat Katha
—
একবার আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠীর দিন কৈলাসে মা দুর্গা মহাদেবের ওপর অসন্তুষ্ট হয়ে অনেকক্ষণ কথা বলেননি।’ অনেক সাধ্যসাধনা করে মহাদেব দুর্গাকে বললেন, “দেবি। আজ ষষ্ঠীর দিন তুমি মৌনী হয়ে চুপ করে রয়েছ কেন?
আমি এত ডেকেও তোমার কোনো সাড়া পেলুম না, ব্যাপার কী বলত?” দুর্গা বললেন, “তোমায় বলে আর ফল কী? তোমারই বরে সন্তান পেয়ে কত সন্তানের মায়েরা আজ ষষ্ঠীর দিনে কত আনন্দ করছে, কিন্তু আমার কোনো সন্তান নেই যে আমি একটু আনন্দ করব।”
মহাদেব বললেন, “পৃথিবীর সকলেই তোমাকে ‘মা’ বলে ডাকছে তবু তোমার সন্তানের সাধ মিটলো না?” দুর্গা বললেন, “না, আমার সাধ মেটেনি, তুমি এখুনি আমার কার্তিককে এনে দাও।” মহাদেব তখন লেন কার্তিককে আনতে চন্দ্রলোকে। কার্তিক দুর্গার গর্ভে না জন্মালেও সে শিবেরই ছেলে।
এদিকে কৈলাশে জয়া ও বিজয়া মা দুর্গাকে তেল-হলুদ মাখাতে লাগল। এতে মা দুর্গার গা থেকে যত ময়লা বেরুলো তাই দিয়ে দুর্গা একটি পুতুল গড়লেন। সেই সময় নারায়ণ সেইখান দিয়ে যাচ্ছিলেন— পুতুলটি দেখে তাঁর খুব ভালো লাগল, তিনি তখুনি তার মধ্যে প্রবেশ করলেন।
এতে পুতুলটি প্রাণ পেল আর মা দুর্গাকে ‘মা, মা’ বলে তাঁর স্তন পান করতে লাগল। দুর্গা আনন্দে আত্মহারা হয়ে উঠলেন, এমন সময় মহাদেব কার্তিককে এনে দুর্গার কোলো দিলেন। দুর্গার কাছে মহাদেব পুতুলের সব কথা শুনলেন আর কৈলাসে উৎসব করার জন্যে সব দেবতাদের নিমন্ত্রণ করলেন। সমস্ত দেবতারা কৈলাসে এলেন—শুধু এলেন না শনি।
শনি আসেনি দেখে মহাদেবের খুব রাগ হল—কাজেই শনিকে শেষ পর্যন্ত আসতেই হল। কিন্তু শনি চোখে হাত চাপা দিয়ে রইলেন। শনি ছিলেন সম্পর্কে দুর্গার ভাই—এক সময় দুর্গা তাঁকে বর- দিয়েছিলেন যে, শনি যার দিকে চাইবে সঙ্গে সঙ্গে তার মুণ্ডু খসে পড়বে।
এদিকে শনি ছেলেটিকে দেখছে না বলে মহাদেবের আরও রাগ হল। শনি তখন বাধ্য হয়ে চোখ খুলে ছেলেটির দিকে চাইলেন, তাঁর দৃষ্টিতে তখুনি ছেলেটির মাথা উড়ে গেল। দুর্গা তখন খুব কাঁদতে লাগলেন, তিনি শনির ওপর ভয়ানক অসন্তুষ্ট হলেন, কিন্তু হঠাৎ তাঁর শনিকে বর দেওয়ার কথা মনে পড়ে গেল।
দুর্গা নিজের ভুল বুঝলেন বটে, তবে ছেলেটির জন্যে কাঁদতে লাগলেন। এই রকম ঘটনা ঘটার ফলে — দেবতাদের অনুরোধে মহাদেব নন্দীকে বললেন, “যাও নন্দী, তুমি ত্রিভুবন ঘুরে এসো– যেখানে দেখবে কেউ উত্তর দিকে শিয়র করে শুয়ে আছে অমনি তার মুখটা কেটে নিয়ে আসবে।”
নন্দী সঙ্গে সঙ্গে বেরিয়ে পড়ল আর স্বর্গ, মর্ত্য ও পাতাল ঘুরে এক জায়গায় দেখল একটা হাতি উত্তর দিকে মাথা করে শুয়ে আছে। নন্দী তখনই তার মাথাটা কেটে মহাদেবের কাছে নিয়ে এল।
মহাদেব সেটি ছেলের কাঁধে জোড়া দিয়ে দিলেন আর ছেলেটিও ‘মা, মা’ বলে ডাকতে লাগল। ছেলের মুখ, হাতির মাথা হলো দেখে দুর্গা খুব দুঃখ করতে লাগলেন। দুর্গার এই রকম ভাবে দুঃখ করার জন্যে দেবতারা তাকে বললেন, “মা, আপনি দুঃখ করবেন না।
Durga Sasthi Vrat Katha
এই ছেলের নাম রাখা হোক গণপতি—এর পূজো সকলের আগে লোককে করতে হবে তারপর আমরা সকল দেবতারা পুজো নেবো।” এরপর দুর্গা, কার্তিক আর গণেশকে নিয়ে হিমালয়ে গিরিরাজের ঘরে এসে
ছেলেদের দেখিয়ে মেনকাকে সব ঘটনার কথা বললেন, তখন মেনকা খুব ঘটা করে গিরিপুরে দুর্গাষষ্ঠীর ব্রত করলেন। দুর্গা বললেন, “মা! আশ্বিনের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী- তিথিতে যে স্ত্রীলোক ভক্তিভরে আমার পুজো করবে এবং কথা শুনবে—আমার মতন তার সুন্দর সন্তান লাভ হবে।
ক্রমে এই দুর্গাষষ্ঠীর কথা জগতে প্রচার হল। সবাই তখন এই ব্রত খুব ভক্তিভরে করতে আরম্ভ করল। ব্রতের ফল—এই ব্রত পালন করার ফলে ছেলে-মেয়েদের সর্বাঙ্গীন কল্যাণ হয়ে।
Durga Sasthi Vrat Katha
আরও পড়ুন: শ্রীশ্রী দুর্গার অষ্টোত্তর শতনাম
ভারতশাস্ত্র এর সমস্ত আপডেট এখন GNews, Facebook এবং Telegram – পেয়ে যাবেন। Google Play Store এও আমাদের উপলব্ধ রয়েছে Bharatsastra App