বিপত্তারিণী ব্রতের সময় বা কাল – আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষের থেকে আরম্ভ করে , দশমীর ভেতর যে শনিবার ও মঙ্গলবার পড়ে সেই বারে এই ব্রত করার নিয়ম । সধবা মাত্রেই এই ব্রত করতে পারে ।
Bipottarini broto
বিপত্তারিণী ব্রতের দ্রব বিধান – বড় নেবেদ ১ টি , কয়েকটি কুচো নেবেদ , একটা ভুজয়ী , ১৩ রকম ফুল , ১৩ রকম ফল কেটে দু -ভাগ করা ,একটা চুপড়িতে ১৩ গাছা লাল সুত ,পান , সুপারি ,চুন, খয়ের , ঘি ,ময়দা ইতাদি প্রয়োজন।
যে ব্রত করে ব্রতের আগের দিন তাকে হবিষ করে থাকতে হয় । ব্রতের জন্যে একটা ঘট পেতে তার ওপর আমের ডাল ও সরা দিতে হয় । এই সরাতে নানা রকমের ফল মূল দিয়ে মা দুর্গার পূজা করতে হয় । ১৩ টি ফুল ,ফল ও পিঠেও এর সঙ্গ দিতে হয়।
যে ব্রত করে তার জন্যে ১৩ টি ফল দু -ভাগ করে দিতে হবে এবং তার সঙ্গে পান সুপারি থাকবে । এই জিনিস গুলির একটা ভাগ ব্রাহ্মণকে দিতে হয় আর অন্য একটা ভাগ থাকবে ব্রতীর জন্যে।
১ টা পেতে আর ভোজ্য ব্রাহ্মণ কে দান করা নিয়ম । পুজোর শেষে ব্রাহ্মণকে দক্ষিণা দিয়ে ১৩ টি গাট দেওয়া লাল সুত স্ত্রীলোকের বা হাতে আর পুরুষের ডান হাতে বেধে দিতে হয় । ব্রতীকে সেই দিন লুচি খেতে হয় ।
বিপত্তারিণী ব্রত কথা – পুরকালে নারদ ঋষি বেড়াতে বেড়াতে একদিন কেলাস -এ গিয়া উপস্থিত হলেন । সেখানে শিব ও দুর্গা কে প্রণাম করে জিজ্ঞাসা করলেন, – ”প্রভু , আপনিতো মঙ্গল ময় আর সব রকম মঙ্গল এর কারণ , এখন বলুন তো , কি ব্রত করলে মানুষ সন রকম বিপদ থেকে মুক্তি পেতে পারে ?”
নারদের কথা শুনে মহাদেব বললেন, “যে স্ত্রীলোক বিপত্তারিণীর ব্রত করে, সে সব রকম বিপদ থেকেই উদ্ধার পায়।” নারদ জিজ্ঞাসা করলেন, “পূর্বে এই ব্রত কে করেছিলেন , তার নিয়ম কি এবং ফল কি অনুগ্রহ করে আমাকে বলুন।”
নারদের এই কথা শুনে মহাদেব বললেন, “পুরকালে বিদর্ভ রাজ্যে এক সত্য নিষ্ঠা রাজা ছিলেন। তার স্ত্রীও ছিলেন নানা গুনে সম্পন্ন। ঘটনা চক্রে একদিন চমারের বউয়ের সঙ্গে তার পরিচয় হয়।
আরও পড়ুন – হরিষ মঙ্গলচন্ডীর ব্রতকথা
লুকিয়ে লুকিয়ে তারা অনেক জিনিসপত্র দেওয়া নেওয়া করতে লাগলো। একদিন দুজনের নানা কথাবার্তা বলার মাঝখানে রাণী বললেন কখনো গোমাংস আমি দেখিনি তুমি একটু গোমাংস আমাকে লুকিয়ে এনে দিতে পারো ?
এরপরে রাণীর কথামত চামর বউ একদিন একটু গোমাংস বেশ ঢাকাঢুকি দিয়ে এনে রানীকে দিয়ে গেল। রণীও সেটা নিজের ঘরে ঘরে লুকিয়ে রাখলেন। ক্রমে কথাটা রাজার কানে গিয়ে উঠল এবং রাজা খুবই রেগে গেলেন।
পরক্ষণেই তিনি অন্তঃপুরে গিয়ে রানীকে বললেন “তোমার ঘরে তুমি কি লুকিয়ে রেখেছ শিগগির আমাকে দেখাও। তা নাহলে তোমার গর্দান যাবে।”
রাজার রাগ দেখে রাণীর খুব ভয় হল। কাঁপতে কাঁপতে রাণী বললেন আমার ঘরে নানা রকম ফলমূল আছে প্রভু।” রাজাকে এইকথা বলার পর রানি ঘরে ঢুকে মনে মনে মা দুর্গাকে খুব ডাকতে লাগলেন। রাণী মনে মনে বললেন, “মা বিপত্তারিণী !
আমি আজ খুব বিপদে পড়েছি , আমাকে আশ্রয় দাও মা, এ বিপদ থেকে উদ্ধার মা, আমি সারা জীবন তোমার ব্রত পালন করব।” রাণীর প্রার্থনায় দেবী সন্তুষ্ট হয়ে অভয় দিয়ে বললেন, তোমার স্তবে আমি সন্তুষ্ট হয়েছি, তোমার ঘরে যা ছিল সেটা এখন ফলমূল হয়ে গেছে।
তুমি এখন সেগুলো রাজাকে গিয়ে দেখাও, রাজা খুবই সন্তুষ্ট হবেন।” মা দুর্গার কথা মত রাণী ঘরে গিয়ে দেখলেন যে চুপড়িতে গোমাংশের বদলে রয়েছে একরাশ ফলমূল। রাণী তখন সব এনে রাজাকে গিয়ে দেখালেন আর রাজও খুবই সন্তুষ্ট হলেন। ক্রমেই রাণী ও ঐ ব্রত করতে লাগলেন ও অনেক সুখ লাভ করে দেহ ত্যাগের পর সর্গে চলে গেলেন।
বিপত্তারিণীর ব্রতের ফল – এই ব্রত করলে সংসারে কোন বিপদ আপদ থাকেন। মা বিপত্তারিণী তাকে সকল বিপদ থেকে উদ্ধার করেন।
ভারতশাস্ত্র এর সমস্ত আপডেট এখন টেলিগ্রামে। এখনি যুক্ত হন আমাদের টেলিগ্রাম চ্য়ানেলে। (Join Telegram)