কার্তিকেয় ব্রত : Karttikeya Bratakatha
সময় বা কাল – কার্তিক মাসের সঙ্ক্রান্তিতে অর্থাৎ শেষ দিনে কার্তিক পূজা বা কার্তিকেয় ব্রত করা বিধেয়।
ব্রতকথা – একদিন ধর্মাত্মা বসুদেব দেবর্ষি নারদকে বিনীতভাবে জিজ্ঞাসা করলেন— হে ঋষিবর! আমার পত্নী দেবকী যে সব পুত্র প্রসব করছে তাদের সকলকেই দুরাত্মা কংস হত্যা করেছে।
এখন কি করলে আমদের পুত্র দীর্ঘায়ু লাভ করবে দয়া করে তা আমাকে বলুন।’ দেবর্ষি বললেন, “হে বসুদেব! পূর্বকালে সুভগা নামে এক ধর্মনিষ্ঠ ব্রাহ্মণের দক্ষিণা নাম্নী সত্যবাদিনী ও পতিব্রতা এক পত্নী ছিল।
তাদের কোন সন্তানাদি ছিল না। এই দুঃখে একদিন সুভগা গৃহ ত্যাগ করে গভীর বনে যাত্রা করলে তার স্ত্রী দক্ষিণাও তাকে অনুসরণ করল।
ব্রাহ্মণ পত্নীসহ সেই বনে ঘুরতে ঘুরতে এক সরোবর তীরে উপস্থিত হয়ে দেখল, কয়েকজন নারী সেই স্থানে সমবেত হয়ে ধানের অঙ্কুর দ্বারা শোভিত স্থানে অষ্টদলপদ্ম রচনা করে তার মধ্যে কার্তিকের মূর্তি স্থাপন করে ব্রত করছে।
দক্ষিণা তাদের কাছে জিজ্ঞাসা করে জানতে পারল, তারা কার্তিকেয় ব্রত করছে। তখন সেই নারীদের কাছে দক্ষিণা জানতে চাইল যে, এই ব্রত করলে কি ফল হয়।
তারা বলল, ‘নারীরা পুত্র কামনা করে কার্তিক মাসের বৃশ্চিকরাশিস্থিত সংক্রান্তির দিনে এই ব্রত করবে।
ধানের অঙ্কুরে শোভিত স্থানে অষ্টদলপদ্ম রচনা করে তার মধ্যে সামর্থ্যানুযায়ী সোনার, রূপোর, তামার বা মাটির কার্তিকেয়-মূর্তি স্থাপন করে মূর্তির সামনে ঘট স্থাপন করবে।
এই ঘটে যথাক্রমে-গণেশ, নারায়ণ, ব্রহ্মা, শিব, দুর্গা, লক্ষ্মী, সরস্বতী, লোকপাল, নবগ্রহ এবং ময়ূর ও গরুড়ের পুজো করে যথাবিধি কার্তিকের ধ্যান করবে।
(আরও পড়ুন কার্তিকের ধ্যান)
তারপর কার্তিকের ষোড়শোপচারে পুজো করে লোহার তৈরী খড়্গ প্রদান করবে। এইভাবে প্রহরে প্রহরে স্নানাদি পুজো করে ব্রতকথা শুনবে।
কার্তিকের পুজো সন্ধ্যার সময় আরম্ভ করে পরের দিন প্রভাতকালে মূর্তি বিসর্জন করতে হয়। এইভাবে চার বছর পূজো করার পর উদযাপন করতে হয়।
উদযাপনের সময় চারখানা ডালা, বস্ত্র, ভোজ্যাদি ও নানারকমের বস্তু দান করতে হয়। নারীরা এই ব্রত পালন করলে ইহকালে পুত্র-পৌত্রাদি নিয়ে সুখে জীবনযাপন করে পরকালে পরম প্রীতিলাভ করে থাকে।
কার্তিকের পুজো করলে সন্তানহীনা নারীদের সুস্থ, সবল ও বুদ্ধিমান পুত্র লাভ হয়।
এরপর দক্ষিণা নিজগৃহে ফিরে এসে ভক্তি ও নিষ্ঠাসহকারে কার্তিকেয় ব্রত আরম্ভ করল। এই ব্রতের মাহাত্ম্যে তারা পুত্র-পৌত্র লাভ করে সুখে কালযাপন করে যথাসময়ে দেহত্যাগ করে বৈকুণ্ঠে যাত্রা করল।
এরপর দেবর্ষি নারদ পুত্রহারা বসুদেবকে উপদেশ দিলেন, ‘হে পুণ্যাত্মা বসুদেব! তোমরা স্বামী-স্ত্রী উভয়ে মিলে কার্তিকেয়-ব্রত আচরণ কর,
তাহলে পরবর্তী যে পুত্র সন্তান জন্মগ্রহণ করবেন তিনি দীর্ঘায়ু লাভ করে ত।ত্রিজগতের অশেষ কল্যাণসাধন করবেন।’
দেবর্ষির কথামত বসুদেব ও দেবকী কার্তিকেয়-ব্রত করে ত্রিলোকপতি নারায়ণকে পুত্ররূপে লাভ করেছিলেন।
পড়ুন – কার্ত্তিক মাসের ব্রতকথা
ভারতশাস্ত্র এর সমস্ত আপডেট এখন টেলিগ্রামে পেয়ে যাবেন (Join Telegram)