সুয়ো দুয়োর ব্রতকথা
সুয়ো-দুয়োর ব্রতের সময় বা কাল- পৌষ মাসের মকর সংক্রান্তির দিন এই ব্রত করার নিয়ম । এই ব্রত স্ত্রী-পুরুষ সকলেই করতে পারে।
সুয়ো-দুয়োর ব্রতের দ্রব্য ও বিধান- কলা পেটোর ডিঙি, গাঁদা ফুল, জোড়া কলা, জোড়া পান, সুপারি, পৈতা, করির ভার দিয়ে সাজাতে হবে।
ব্রতের বিধান অনুসারে মকর সংক্রান্তির দিন উপোস করে থেকে পরের দিন ওই পেটোতে ঘিয়ের প্রদীপ জ্বেলে জলে ভাসিয়ে দিতে হবে।
সুয়ো দুয়োর ব্রতকথা – এক দেশে এক সওদাগর বাস করত। তার একটি কন্যা সন্তান আর সাতটি পুত্র সন্তান ছিল। ছেলেদের জন্মবার আগেই সে তার কন্যা সন্তানকে বিবাহ দিয়ে দিয়েছিল।
Sponsred – মেয়েদের ব্রতকথা (Price – ₹150.00)
মেয়ের বিয়ে দেওয়ার পর থেকে সওদাগর তার মেয়ের কোন খোঁজখবর রাখতে পারেনি। এইজন্য সওদাগরের ছেলেরা শুধুমাত্র তার বোনের কথা শুনেছিল, তাকে দেখবার সুযোগ সেই ভাই গুলোর হয়নি।
কিছুদিন যাওয়ার পর সওদাগর মারা গেলেন। এরপর সওদাগরের ছেলেরা বড় হয়ে বাণিজ্য করতে বেরোলো। বাণিজ্যে বেরিয়ে, তাদের খাবার জোগাড় করার জন্য তারা নদীর
একটা মোহনায় তাদের ডিঙা বেঁধে রেখে খাবারের ব্যবস্থা কথা ভাবছি এমন সময় কাছের ই একটা গায়ের লোক বলে পরিচয় দিয়ে জনক তখন লোক তাদের বলল,
“এখানে খাবার মত কিছুই তোমরা পাবে না- তোমরা আমাদের সঙ্গে আমাদের বাড়িতে চলো, সেখানে আমরা তোমাদের খাবার দাবার সব ব্যবস্থা করে দেব ,
আর তোমরা খাওয়া-দাওয়া করে জিরিয়ে আবার এসে ডিঙ্গা ছাড়তে পারবে। ডিঙা এখন এখানেই বাধা থাক।”
সওদাগরের ছেলেরাও দেখল যে, এখানে কোন দোকানপাট যখন দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না, তখন এদের সঙ্গে যাওয়াই যায় বোধহয় ভালো।
এই ভেবে তারা ঐ লোকদের সঙ্গে তাদের বাড়িতে গেল। বাড়িতে নিয়ে গিয়ে, সেই লোক গুলো সওদাগরের ছেলেদের খুব খাতির যত্ন করল আর বলল, “আপনারা জলখাবার খেয়ে এখানে খানিক জিরিয়ে নিয়ে,
আমরা এখন যাচ্ছি, কাজ সেরে খুব শিগগির ফিরে আসবো।”এই কথা বলে তাদের জন্য জলখাবার এনে দিয়ে একটু পরেই তারা বেরিয়ে গেল। সেই বাড়ির ভিতরে একটি বউ রান্না করছিল।
বাড়ির পুরুষরা বেরিয়ে যেতে সে একবার উঁকি মেরে দেখল যে, সাতজন সুন্দর ছেলেকে তার স্বামী আর দেওরের একটি ফন্দি করে ভুলিয়ে বাড়িতে এনেছে, এদের তারা মেরে ফেলবে।
বউটি তখন তাদের কাছে এসে জিজ্ঞাসা করল,”আপনাদের বাড়ি কোথায়?”সাত ভাইয়েরা তখন তাদের পরিচয় দিল। বউটি তখন বলল,”তোমরা তো দেখছি আমার ভাই- তোমরা
এখানে আর এক দন্ড ও থেকো না- পালিয়ে যাও। যারা তোমাদের এখানে নিয়ে এসেছে , তারা ডাকাত, ফিরে এসে তোমাদের মেরে ফেলবে আর ডিঙার পত্র নিয়ে নেবে।
তোমরা যেমন করে হোক এই বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়ে এখান থেকে পালিয়ে যাও, আর তোমরা উত্তর মুখে যেও। “সওদাগরের ছেলেরা তার কথামতো বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিল এবং
ঘাটে গিয়ে তখনই তাদের ডিঙ্গা ছেড়ে দিল। ডাকাতরা সেই সময় বাড়িতে ফিরছিল, তারা দূর থেকে দেখতে পেল যে, তাদের বাড়িতে আগুন লেগেছে। তারা ছুটে এলো আগুন নেভাবার জন্য।
এসে দেখলো যে, সওদাগরের পালিয়ে গেছে। বউটি তখন তাদের বলল যে, তারা দক্ষিণ দিকে যাবে বলে গেছে। এরপরই ওই সাত সদাগরের ডিঙা তাদের দেশের ঘাটে এসে পৌছালো।
সেখানে নেমে তারা দেখল যে, তাদের মা, সেই ঘাটে কলার পেটক সাজিয়ে জলে ভাসিয়ে দিচ্ছে। তারা মাকে তাদের বোনের সঙ্গে দেখা হওয়ার সব কথা বলল।
অনেকদিন পরে মেয়ের খবর পেয়ে তাদের মায়ের খুব আনন্দ হল। তাদের মা তখন মেয়ে জামাই ও তার ভাই এদের চিঠি দিয়ে নিমন্ত্রণ করে পাঠালো।
চিঠি পেয়ে তার মেয়ে, স্বামী আর দেওরের নিয়ে বাপের বাড়িতে এসে পৌছালো। সওদাগরের সাত ছেলে মিলে বোন , ভগ্নিপতি আর বোনের দেওরের খুব খাতির যত্ন করল।
তারা তাদের ওই ডাকাতি ব্যবস্থা ছেড়ে দেওয়ার জন্য খুব অনুরোধ করলো। তারাও ডাকাতি ছেড়ে দিতে রাজি হলো বটে, কিন্তু বলল যে,
এতদিন তারা যে পাপ করেছে সে পাপ খন্ডন হবে কেমন করে।
তখন সাত সাগরের মা বলল,”দেখো বাছারা! তোমরা সুয়ো-দুয়োর ব্রত পালন করো, তাহলে তোমাদের আর কোন পাপ থাকবে না।”
এরপর থেকে সুয়ো- দুয়োর ব্রত করে তারা বেশ সুখে দিন কাটাতে লাগলো।
সুয়ো দুয়োর ব্রতের ফল- এই ব্রত পালন করলে হারানো আত্মীয়দের সন্ধান পাওয়া যায়।।
আরও পড়ুন— শীতল ষষ্ঠীর ব্রত Sital Sosthi Brotokotha, পাটাই ষষ্ঠীর ব্রতকথা
ভারতশাস্ত্রের সমস্ত আপডেট এখন টেলিগ্রামে (Join Telegram)