মৌনী অমাবস্যা ব্রত

মৌনী অমাবস্যা ব্রতকথা | Mouni amavasya Vratkatha Bangla

এক দেশে এক গয়লানী আর এক বিধবা ব্রাহ্মণীর মধ্যে খুব ভাব ছিল। একজন অন্যকে ছেড়ে থাকতে পারত না বললেই চলে। ব্রাহ্মণীর শুধু একটি মাত্র মেয়ে ছিল। আর গয়লানীর ছিল একঘর ছেলে-মেয়ে। একদিন এক ভিক্ষুক ব্রাহ্মণীর বাড়িতে এসে দেখল যে, ব্রাহ্মণী তার মেয়েটিকে নিয়ে বসে আছে।

ভিক্ষুক
ভিক্ষুক

তাদের দেখে ভিক্ষুক বলল, “মা! তোমার এমন সুন্দরী মেয়ে, কিন্তু ওর ভাগ্য তেমন ভাল নয়। আমি ওর কপাল দেখে বুঝতে পারছি যে, ওর কপালে বৈধব্য-যোগ লেখা আছে।” ব্রাহ্মণী তখন ভিক্ষুকের পায়ে পড়ে বললেন, “আপনি যখন ওর কপাল দেখে ওর বৈধব্য-যোগের কথা জানতে পেরেছেন, তখন তার প্রতিকার কিছু আছে কিনা, আর কী তার প্রতিকার, তাও আপনি নিশ্চয়ই জানেন। আপনি দয়া করে তাহলে ওর প্রতিকারও আমায় বলে দিন।”

ভিক্ষুক বলল, “হ্যা প্রতিকার আছে, আর প্রতিকারও আমি জানি-যদি কারুর কাছ থেকে মৌনী অমাবস্যার ফল পাওয়া যায়, আর সে সেই ফলগুলো দান করে, তাহলে ওর স্বামীকে সেই ফল খাওয়ালে ওর মরা স্বামী বেঁচে উঠবে।

তবে তার একটা বিপদ এই আছে যে, সেই ফল যে দান করবে তার কিন্তু খুব অমঙ্গল হবে!” ব্রাহ্মণী বলল, “তাহলে আপনি তারও যাতে অমঙ্গল নাশ হয়, তার উপায় বলে দিন।” ভিক্ষুক বলল, “ঐ যে গাঁয়ের ধারে একটা কুটে রুগী পড়ে আছে, তার মাথায় যদি এক ভাঁড় দই ঢেলে দিয়ে, জিভ দিয়ে চেটে সেই দই তুলে নিতে পারে, তাহলে তার সব অমঙ্গল কেটে যাবে।”

এর পর বেশ কিছুদিন কেটে গেল। বামনীর মেয়ের বিয়ে হয়ে গেল। বর যখন বাসরঘরে বসে বেশ গল্প-গুজব করছে এমন সময় হঠাৎ সে ঢলে পড়ল, সঙ্গে সঙ্গে তার প্রাণ বেরিয়ে গেল। বাড়িতে তখন কান্নার রোল উঠলো।

Newly married wife crying
Newly married wife crying

ব্রাহ্মণী এর প্রতিকারের কথা-জেনে রেখেছিল, আর সে তখন ছুটে গয়লানীর বাড়ি গেল এবং গয়লানীর কাছ থেকে মৌনী-অমাবস্যার সাতটি ফল চেয়ে নিয়ে এসে জামাইয়ের মুখে ছোঁয়াল। সঙ্গে সঙ্গে জামাই বেঁচে উঠলো।

পরের দিন গয়লানী কাঁদতে কাঁদতে ব্রাহ্মণীর কাছে ছুটে এসে বলল, “সই আমার ছেলে-মেয়েরা সবাই মরে পরে আছে-এখন কী হবে দিদি-তুমি যেমন করে পার আমায় রক্ষে কর।” ব্রাহ্মণী তাকে ‘কোন ভয় নেই’ বলে সান্ত্বনা দিয়ে তখনি এক ভাঁড়

Brahmin widow crying
Brahmin widow crying

এই নিয়ে গয়লানীকে সঙ্গে করে গাঁয়ের ধারের সেই কুটে রুগীর কাছে গিয়ে সমস্তদইটা তার মাথায় ঢেলে দিল এবং গয়লানীকে বলল, “এইবার তুমি সমস্ত দইটা জিভ দিয়ে চেটে তুলে নাও সই।” গয়লানী কোনো কিছু মনে না করে আর ঘেন্না না করে সমস্ত দইটা জিভ দিয়ে চেটে তুলে নিল।

সঙ্গে সঙ্গে কুটের বোগ সেরে সে সুস্থ হয়ে উঠলো। কুটে তখন বলল, “আমি তোমাদের ভক্তি কতদূর তাই পরীক্ষা করছিলুম। আমি পূর্ণব্রহ্ম নারায়ণ। তোমরা বাড়ি ফিরে যাও। সেখানে গেলে দেখতে পাবে, তোমাদের যেমন সংসার ছিল আবার ঠিক তেমনটিই হয়ে গেছে।”

ব্রাহ্মণী আর গয়লানী তখন কুটেরোগীস্বরূপ নারায়ণের পায়ে পড়ে তাঁর শঙ্খ-চক্র-গদা-পদ্মাধারী আনন্দময় দিব্যমূর্তি দেখানোর জন্যে তাঁকে বারংবার মিনতি করতে লাগলো। নারায়ণ তখন চতুর্ভুজ মূর্তি ধারণ করে তাদের দর্শন দিয়ে অদৃশ্য হয়ে গেলেন।

ব্রাহ্মণী আর গয়লানী বাড়িতে ফিরে এসে দেখল তাদের সাজানো সংসার যেমন ছিল তেমনিই আছে। তখন তারা সকলকে এই ঘটনার কথা জানালো। তখন থেকেই দেশে দেশে মৌনী-অমাবস্যা ব্রতর কথা চারিদিকে প্রচার হতে লাগলো।

আমাদের এই পোস্ট টি ভাল লাগলে অন্যদেরকে শেয়ার করতে পারেন। আমরা সম্পূর্ণ ফ্রী তে হিন্দু ধর্মের মন্ত্র স্তোত্রম ব্রতকথা ইত্যাদি হিন্দু ধর্মের পূজা অর্চনা শেখানোর চেষ্টা করছি। আপনি আমাদের কে কিছু অর্থনৈতিক সাহায্য করলে আমরা আপনার কাছে বাধিত থাকিব। এখানে ক্লিক করুন।

আরও পড়ুন – বারোমাসের ব্রতকথা 

Join Bharatsastra Telegram channelJoin Whatsapp bharatsastra

Leave a Comment