একাদশীব্রত মাহাত্ম্য | Ekadashi Mahatmya in Bengali
ভদ্রশীলের কাহিনী
পুরাকালে গালব নামে এক মহান মুনি নর্মদা নদীর তীরে বাস করতেন। তাঁর ভদ্রশীল নামে এক বিষ্ণুভক্ত পুত্র ছিল। সে ছোটবেলা থেকে বিষ্ণুমূর্তি বানিয়ে পূজা করত। বালক হয়েও লোককে বিষ্ণুপূজার উপদেশ ও একাদশী পালন করতে নির্দেশ দিত, নিজেও পালন করত।
পিতা একদিন জিজ্ঞাসা করেন-আচ্ছা ভদ্রশীল। তুমি অতি ভাগ্যবান। তুমি বলো তো, রোজ শ্রীহরির পূজা করা, একাদশী (Ekadashi Mahatmya in Bengali) তিথি পালন করা-এরূপ ভক্তি কিভাবে তোমার উদয় হল?”
উত্তরে ভদ্রশীল বলতে লাগল বাবা। আমি পূর্বজন্মের কথা ভুলিনি। আগের জন্মে যমপুরীতে গিয়েছিলাম। সেখানে যমরাজ আমাকে এ বিষয়ে উপদেশ করেছিলেন। পিতা অত্যন্ত বিস্মিত হয়ে বললেন-ভদ্রশীল, তুমি পূর্বে কে ছিলে? যমরাজ তোমাকে কি বলেছিল, সব কিছুই আমাকে বলো।
ভদ্রশীল বলল-বাবা। আমি পূর্বে চন্দ্রবংশের এক রাজা ছিলাম। তখন আমার নাম ছিল ধর্মকীর্তি। ভগবান দত্তাত্রেয় আমার গুরু ছিলেন। নয় হাজার বছর আমি পৃথিবী শাসন করেছিলাম। বহু ধর্ম- কর্ম করেছিলাম। পরে যখন আমার অনেক ধনসম্পদ হল তখন আমি পাগলের মতো অধর্ম করতে লাগলাম।
কতগুলি পাষণ্ড ব্যক্তির সঙ্গে আলাপ করতাম। আর কেবল কথা আলাপের ফলেই আমার বহু দিনের অর্জিত পুণ্য নষ্ট হয়ে গেল। আমিও পাষণ্ডী হয়ে গেলাম। তাদের কুযুক্তি নিয়ে যাগযজ্ঞ আদি পুণ্যকর্ম বাদ দিলাম। ফলে আমার সব প্রজারাও অধর্ম করতে লাগল।
প্রজাদের প্রত্যেকের অধর্মের ছয় ভাগের এক ভাগ রাজাকেই গ্রহণ করতে হয়। তারপর একদিন আমি সৈন্যদের সঙ্গে বনে মৃগয়া করতে গেলাম। বহু পশু বধ করলাম। তারপর আমি ক্ষুধা তৃষ্ণায় কাতর ও ক্লান্ত হয়ে রেবা নদীর তীরে গেলাম।
প্রখর রোদে তপ্ত হয়ে নদীতে স্নান করলাম। কিন্তু তারপর আমার কোন সেনাকে দেখতে না পেয়ে চিন্তিত ও অতিশয় ক্ষুধার্ত হলাম। অন্ধকার হয়ে এল। আমি পথ ঠিক করতে পারলাম না। তারপর এক জায়গায় গিয়ে কয়েকজন তীর্থবাসীকে দেখলাম।
জানলাম তারা একাদশী ব্রত (Ekadashi Mahatmya in Bengali) করেছে। তারা সারাদিন কিছু খায়নি, জলপান পর্যন্তও করেনি। আমি তাদের সঙ্গে পড়ে রাত্রি জাগরণ করলাম। কিন্তু ক্লান্তি ক্ষুধা পিপাসায় কাতর হয়ে রাত্রি জাগরণের পর আমার মৃত্যু হল। তখন দেখলাম বড় বড় দাঁত বিশিষ্ট দুজন ভয়ংকর যমদূত এসে আমাকে দড়ি দিয়ে বাঁধল।
আর ক্লেশময় পথ দিয়ে আমাকে টেনে নিয়ে চলল। তারপর যমপুরীতে পৌঁছলাম। যমরাজও দেখতে তখন ভয়ংকর। যমরাজ চিত্রগুপ্তকে ডেকে আমাকে দেখিয়ে বললেন-পণ্ডিত। এই ব্যক্তির যেরূপ শিক্ষাবিধান তুমি তা আমাকে বলো।
চিত্রগুপ্ত কিছুক্ষণ বিচার করে ধর্মরাজ যমকে বললেন-হে ধর্মপাল। এই ব্যক্তি পাপকর্মেই রত ছিল সত্য, কিন্তু তবুও একাদশীর (Ekadashi Mahatmya in Bengali) উপবাস জন্য সমস্ত পাপ থেকে মুক্ত হয়েছে। তীর্থবাস ও রাত্রি-জাগরণও করেছে। তাই ওর সব পাপ নষ্ট হয়েছে।
চিত্রগুপ্ত এই কথা বললে যমরাজ খুব চমকে উঠলেন, তিনি ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে ভূমিতে দণ্ডবৎ প্রণাম জানিয়ে আমাকে পুজা করতে লাগলেন।
তারপর তাঁর দূতদের আহ্বান করে বলতে লাগলেন-হে দূতগণ! তোমরা ভাল করে আমার কথা শোনো। তোমাদের মঙ্গলজনক কথা আমি বলছি। যে সব মানুষ ধর্মরত, তোমরা তাদেরকে এখানে আনবে না। যাঁরা শ্রীহরির ভক্ত, পবিত্র, একাদশীব্রত পরায়ণ, জিতেন্দ্রিয় এবং যাঁদের মুখে সর্বদা ‘হে নারায়ণ, হে গোবিন্দ, হে কৃষ্ণ, হে হরি’ উচ্চারিত হয়; যাঁরা সকল লোকের হিতকারী ও শান্তিপ্রিয়, তাদেরকে তোমরা দূর থেকেই পরিত্যাগ করবে। কারণ, সেই সব ব্যক্তিকে আমার শিক্ষা দেবার অধিকার নেই।
যাঁরা সর্বদা হরিনামে আসক্ত, সর্বদা হরিকথা শ্রবণে আগ্রহী, যাঁরা পাষণ্ডগণের সঙ্গ করে না, ভক্তদের শ্রদ্ধা করে, সাধুসেবা অতিথিসেবা পরায়ণ, তাঁদেরকে পরিত্যাগ করবে। হে দূতগণ! তোমরা শুধু তাদেরকেই আমার কাছে ধরে আনবে, যারা উগ্রস্বভাব, ভক্তদের অনিষ্ট করে, লোকদের সঙ্গে কলহ বাধায়, একাদশী ব্রত পালনে একান্ত পরাম্মুখ, পরনিন্দুক, ব্রাহ্মণের ধনে লোভ পরতন্ত্র, হরিভক্তি বিমুখ, যারা ভগবদ্ বিগ্রহ দেখে শ্রদ্ধাবত হয় না, মন্দির দর্শনে যাদের আগ্রহ নেই, অন্যের অপবাদ করে বেড়ায়, তাদের সবাইকে বেঁধে এখানে নিয়ে আসবে।’
যমরাজের মুখে এসব কথা শুনে আমি আমার পাপকর্মের জন্য অত্যন্ত অনুশোচনা করতে থাকি। তারপর আমি সূর্যের মতো উজ্জ্বল দেহ লাভ করলাম। একটি দিব্য বিমানে চড়িয়ে আমাকে যমরাজ দিব্যলোকে পাঠিয়ে দিলেন। কোটি কল্প সেখানে অবস্থান করার পর ইন্দ্রলোক, স্বর্গে নেমে আসি।
সেখানে বহুকাল যাবৎ অবস্থান করার পর এই পৃথিবীতে এসে সদাচারী মহান ব্রাহ্মণকুলে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার জাতিস্মরতা হেতু এসব ঘটনা আমার হৃদয়ে জাগ্রত আছে। আমি পূর্বে একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য জানতাম না। অনিচ্ছাকৃতভাবে যখন একাদশী পালনে এত ফল লাভ করেছি। তাহলে ভক্তি সহকারে একাদশী ব্রত উপবাস করলে কি প্রকার ফল লাভ হয় তা জানি না।
তাই বৈকুণ্ঠধামে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছায় আমি পবিত্র একাদশীব্রত (Ekadashi Mahatmya in Bengali) ও প্রতিদিন বিষ্ণুপূজা করব এবং অন্যদেরও এসব পালন করতে উৎসাহী করব। পুত্রের কথা শুনে গালব মুনি অতি সন্তুষ্ট হয়ে ভাবলেন, আমার বংশে এই পরম বিষ্ণুভক্তের জন্ম হয়েছে, তাই আমার জন্ম সফল, আমার বংশও পবিত্র হল।
আরও পড়ুন – শ্রী শ্রী চণ্ডী অধ্যায় ৩ সারাংশ
আমাদের এই পোস্ট টি ভাল লাগলে অন্যদেরকে শেয়ার করতে পারেন। নিচের কমেন্ট সেকশনে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন কেমন লাগলো। এছাড়া আপনার মতামত জানতে পারেন।
আমরা সম্পূর্ণ ফ্রী তে হিন্দু ধর্মের মন্ত্র স্তোত্রম ব্রতকথা ইত্যাদি হিন্দু ধর্মের পূজা অর্চনা শেখানোর চেষ্টা করছি। আপনি খুশি হয়ে আমাদের কে কিছু অর্থনৈতিক সাহায্য করলে আমরা আপনার কাছে বাধিত থাকিব। অর্থনৈতিক সাহায্য করতে এখানে ক্লিক করুন।