কোন তিথিতে কি খাওয়া উচিত নয় ও তার ফল

কোন তিথিতে কি খাওয়া উচিত নয় ও তার ফল

বর্তমানে মানুষের শারীরিক রোগ গুলির মধ্যে সবচেয়ে বেশি যেটা দেখা যায় সেটি হল পেটের রোগ। এর কারণ আমরা বর্তমান যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে কোন কিছুই না মেনেই যখন তখন এটা ওটা খেয়ে নিই। এরফলে শুধুমাত্র পেটের অসুখ নয় সাথে অনেক অজস্র পাপ করে থাকি।

আমরা যদি আমাদের ভারত এর হিন্দু শাস্ত্র মেনে খাদ্য গ্রহণ করি তাহলে আমরা এই রোগএর প্রকোপ থেকে রক্ষা পেতে পারি। শুধুমাত্র পেটের অসুখ থেকে মুক্তি নয়, আমরা অনেক পাপ করার থেকে মুক্ত হতে পারি।

আজকে আমরা কোন তিথিতে কি খাওয়া উচিত নয় ও তার ফলাফল সাথে কোন মাসে ও কোন দিনে কি খাওয়া উচিত নয় সেই বিষয়ে জানব।

প্রাচীন শাস্ত্রে ভোজনের (খাওয়ার) কিছু নিয়ম আছে। খাওয়ার আগে হাত পা মুখ ভাল করে ধুয়ে পরিষ্কার আসনে বসে খেতে হয়। খাওয়ার আগে গুন্ডষ ও পঞ্চগ্রাস করতে হয়। উত্তর মুখ ও কোনাভি মুখ হয়ে খেতে নেই।

গাড়িতে, শ্মশানে, ঠাকুর ঘরে, শুয়ে শুয়ে, দাড়িয়ে, চলতে চলতে, ভিজে বস্ত্রে, ভিজে মাথায়, অনেক সকালে সন্ধ্যে বেলায়, মাথায় কাপড় জড়িয়ে, জুতা পরে খাদ্য গ্রহণ করতে নেই।

উচ্ছিষ্ট পাত্রে ঘৃত ও রাত্রে দই খেতে নেই। বাম হাতে বা এক হাতে ব্রাহ্মণদের খেতে নেই। বাম হাতে জল খাওয়ার সময় ডান হাত তার সাথে স্পর্শ করতে হবে।

শাস্ত্রে তিথি মাস ও বার ভেদে কতকগুলি খাদ্য দ্রব্য গ্রহণ নিষেধ আছে। আহ্নিকতত্ত্বধৃত স্মৃতিবচন অনুযায়ী –

কুষ্মাণ্ডে চার্থহানিঃ স্যাদ্‌ বৃহত্যাং ন স্মরেদ্ধরিম্। বহুশত্রুঃ পটোলে স্যাদ্ধন হানিস্ত্র মূলকে।। কলঙ্কী জায়তে বিল্বে তির্য্যকযোনিশ্চ নিম্বক। তালে শরীরনাশঃ স্যান্নারিকেলে চ মূর্খতা।।

তুম্বী গোমাংসতুল্যা স্যাৎ কলম্বী গোবধাত্মিকা। শিম্বী পাপকরী প্রোক্তা পূতিকা ব্রহ্মঘাতিকা।। বার্ত্তাকে সুতহানিঃ স্যাচ্চির রোগী চ মাষকে। মহাপাপকং মাংসং প্রতিপদাদিষু বর্জ্জয়েৎ।। অর্থাৎ

১) প্রতিপদ তিথিতে কুষ্মাণ্ড অর্থাৎ চাল কুমড়া খেলে ভোক্তার অর্থ হানি হয়।

২) দ্বিতীয়া তিথিতে বৃহতী  অর্থাৎ বেগুন খেলে হরিস্মরণে অধিকার থাক না।

৩) তৃতীয়া তিথিতে পটল খেলে শত্রু বৃদ্ধি হয়।

৪) চতুর্থী তিথিতে মূলো খেলে ধান হানি হয়।

৫) পঞ্চমী তিথিতে বেল খেলে কলঙ্ক জন্মে।

৬) ষষ্ঠী তিথিতে নিম্ব অর্থাৎ নিম খেলে সন্তান ভাগ্য খারাপ হয় এবং পক্ষি পশ্বাদি যোনি লাভ করে।

৭) সপ্তমী তিথিতে তাল খেলে শরীর নাশ হয়।

৮) অষ্টমী তিথিতে নারিকেল খেলে মূর্খতা জন্মে।

৯) নবমী তিথিতে লাউ খেলে গোমাংস ভক্ষণ তুল্য পাপ হয়।

১০) দশমী তিথিতে  কলম্বী অর্থাৎ কলমি শাক খেলে গোবধ স্বরুপ পাপ হয়।

১১) একদশী তিথিতে শিম্বী অর্থাৎ শিম খেলে পাপকারী হয়।

১২) দ্বাদশী তিতিহীতে পূতিক অর্থাৎ পুই শাক খেলে ব্রাহ্ম ঘাতিক হয়।

১৩) ত্রয়োদশী তিথিতে বার্ত্তাকূ খেলে পুত্র হানি হয়।

১৪) চতুর্দশী তিথিতে মাষকলাই খেলে চির রোগী হয়।

১৫) পূর্ণিমা ও অমাবস্যা তিথিতে মাছ মাংস খাওয়া মহা পাপকর হয়। অতএব প্রতিপদাদি তিথি অর্থাৎ প্রতিপদ থেকে পূর্ণিমা অমাবস্যা তিথিতে ঐ সকল দ্রব্য খাওয়া উচিত নয়।

এছাড়া শাস্ত্রে রবি বার মসুর ডাল ও আমিষ খাওয়া নিষেধ করেছে। কার্ত্তিক মাসেও মাছ মাংস খাওয়া নিষেধ। বিশেষ করে কার্ত্তিক শুক্ল পক্ষে একাদশী তিহটি থেকে পূর্ণিমা তিথি পর্যন্ত পঞ্চদিন বকপঞ্চক, এই দিনগুলি অত্যন্ত নিষেধ, বক ও ঐ পঞ্চদিন মাছ খায়না।

মহাভারতে কথিত  আছে – “চণ্ডালো জায়তে রাজন। কার্তিকে মাংসভক্ষণাৎ।” অর্থাৎ কার্ত্তিক মাসে মাংস ভক্ষণ করিতে চাণ্ডালত্ব প্রাপ্ত হয়।

আরও পড়ুন – দেবগুরু বৃহস্পতির কাহিনী

ভারতশাস্ত্র এর সমস্ত আপডেট এখন GNews, Facebook,  What’s App এবং Telegram – পেয়ে যাবেন। Google Play Store এও আমাদের উপলব্ধ রয়েছে Bharatsastra App

Leave a Comment