দেবশিল্পী বিশ্বকর্মার পুষ্পাঞ্জলি মন্ত্র
সাধারণতঃ আমাদের দেশে তথা ভারতবর্ষে ভাদ্র মাসের সংক্রান্তির দিনে অর্থাৎ একদম শেষ দিনে দেবশিল্পী শিল্পাচার্য শ্রীশ্রীবিশ্বকর্ম্মা দেবের পূজা সমস্ত কলকারখানায় ও শিল্প প্রতিষ্ঠানে অনুষ্ঠিত হয়। কেহ প্রতিমায় পূজা করেন তো আবার কেহ বা মাত্র ঘটে এই পূজার অনুষ্ঠান করেন।
এই পূজা পৌরাণিক। বেদে এই পূজার প্রচলন দেখিতে পাওয়া যায় না। তবে বহু পুরাণে এই পূজার বিষয় লিপিবদ্ধ আছে। পুরাণসম্মত পূজায় অধিবাস একটি বিশেষ অঙ্গ।
কিন্তু কলকারখানায় ও শিল্প প্রতিষ্ঠানে এই পূজার বহুল প্রচার থাকায় পূর্ব্ব রাত্রিতে ইহার অধিবাস হওয়া সম্ভব নয়। সেই হেতু পূজার দিন চক্ষুদান ও প্রাণপ্রতিষ্ঠার পর অধিবাস করা হয়।
সংক্ষেপে বিশ্বকর্মা পূজাবিধি —
পূজার দিন প্রভাতে স্নান ও নিত্যকর্ম্ম সমাধা করিয়া পূৰ্ব্বমুখে বা উত্তরমুখে সুখাসনে উপবেশন করিয়া আচমন করিবে। অপবিত্র পাঠ শেষে বিষ্ণু স্মরণ, চন্দন শুদ্ধি, ফুল শুদ্ধি, দুর্বা শুদ্ধি, বিল্বপত্র শুদ্ধি তুলসিপত্র শুদ্ধি, জল শুদ্ধি ও আসন শুদ্ধি করিয়া আহ্নিক করিবেন।
তারপর গায়ত্রী জপ করিবেন। যারা যারা দীক্ষা নিয়েছেন দীক্ষা মন্ত্র জপ করিবেন। জপ শেষে জপ বিসর্জন করিবেন। তারপর সূর্যার্ঘ দান, স্বস্তিবাচন, স্বস্তি সুক্ত পাঠ, সংকল্প ও সংকল্প সুক্ত পাঠ এবং তারপর ঘটস্থাপন করিবেন।
মূর্তি হইলে মূর্ত্তির সম্মুখে, আর মূর্ত্তি না হইলে নিজের সম্মুখে ঘটস্থাপন করিবেন। ঘটস্থাপনের স্থানটি পরিষ্কার করিয়া পঞ্চগুঁড়ি দিয়া অষ্টদল পদ্ম আঁকিয়া তাহার উপর পঞ্চশস্য ছড়াইয়া ঠিক মধ্যস্থলে ঘটে সিন্দূর দিয়া পুতুল আঁকিয়া বসাইবেন।
ঘটের নীচে মাটি দিয়া ঘটটি স্থির করিবেন। জল দিয়া পূর্ণ করিয়া তাহার মধ্যে পঞ্চরত্ন ও কিছু সিদ্ধি দিবেন। ঘটের উপরে পঞ্চপল্লব (আম্রশাখা, বটশাখা, অশ্বত্থশাখা, পাকুড়শাখা ও যজ্ঞডুমুর শাখা) বা অভাবে শুধুমাত্র আম্রশাখা দিয়া তাহার উপর একসরা আতপচাল দিয়া তাহার উপর একটি সশীষ ডাব দিবেন।
ডাবের উপরে সিন্দুর দিয়া শোভিত করিয়া তাহার উপর একটি আচ্ছাদনী গামছা দিবেন। চারিপাশে চারকনে তীর মাটিতে গেথে সূত্রদ্বারা বেষ্টন করিবেন। কুশের ত্রিপত্র দিয়া সেই সেই সব বস্তু স্পর্শ করিয়া নিজ নিজ বেদোক্ত মন্ত্র বলে ঘটস্থাপন সম্পূর্ণ করিবেন।
তারপর সমান্যার্ঘ, দ্বারপূজা, বিঘ্নাপসারন মাসভক্তবলি প্রদান ও ভূতসুদ্ধী ও ভূতাপসারান, আসন শুদ্ধি করিবেন। তারপর যথাশক্তি ন্যাস করিবেন। তারপর প্রাণায়াম করে করন্যাস অঙ্গন্যাস করিবেন।
বিশ্বকর্মা দেবের ধ্যান করিয়া মানসুপচারে পূজা করিবেন। (বিশ্বকর্মার ধ্যান মন্ত্র জানতে এখানে ক্লিক করুন) তারপর গণেশ আদি পঞ্চ দেবতা ও প্রত্যক্ষ দেবদেবীর পূজা করিবেন।
তারপর পিঠপূজা, চক্ষুদান ও প্রাণপ্রতিষ্ঠা করিবেন এবং তারপর অধিবাস শেষ করে প্রধান পূজা যথাশক্তি উপচারে পূজা করিবেন। পূজা শেষে হোম করিবেন। তারপর পুষ্পাঞ্জলি প্রদান করিয়া আরতি করিবেন।
দেবশিল্পী বিশ্বকর্মার পুষ্পাঞ্জলি মন্ত্র —
পুষ্পাঞ্জলি নিয়ম – চন্দন নিয়ে প্রত্যেকের কপালে ফোটা নেবেন তারপর প্রথমে আচমন করে নেবেন। বাম হাতে জল নিয়ে ডান হাতের সমস্ত আঙুল দিয়ে ঐ জল মুখে ছিটা দেবেন আর মন্ত্র বলবেন “নমঃ শ্রী বিষ্ণু, নমঃ শ্রী বিষ্ণু, নমঃ শ্রী বিষ্ণু” এই ভাবে তিনবার করবেন। তারপর দু হাত জোর করে অপবিত্র পাঠ করবেন ও বিষ্ণু স্মরণ করবেন।
অপবিত্র পাঠ – অপবিত্রঃ পবিত্রো বা সৰ্ব্বাবস্থাং গতোঽপি বা। যঃ স্মরেৎ পুণ্ডরীকাক্ষং স বাহ্যাভ্যন্তর শুচিঃ ।।
বিষ্ণু স্মরণ – নমঃ মাধব মাধব বাচি মাধব মাধব হৃদি । মাধব স্মরন্তি সাধব সর্ব কার্যেষু শ্রী মাধব শ্রী মাধব শ্রী মাধবায় নমঃ।। (আরও জানতে এখানে ক্লিক করুন)
এরপর ফুলচন্দন দূর্বা তুলসী পাতা বেলপাতা হাতে করে নিয়ে করজোরে নিচের মন্ত্রগুলি পাঠ করবেন।
দেবশিল্পীন্ মহাভাগ দেবানাং কার্যসাধকঃ। পূজাং গৃহাণ বিধিবৎ কল্যাণং কুরু মে সদা৷৷ ১ ৷৷
প্রনাম করে বিশ্বকর্মার চরণে বা ঘটে বিশ্বকর্মার পুষ্পাঞ্জলি দিবেন, তারপর আবার ফুলচন্দন দূর্বা তুলসী পাতা বেলপাতা হাতে করে নিয়ে হাতজোড় করে দ্বিতীয় মন্ত্রটি পাঠ করবেন।
আয়ুৰ্যশঃ বলং দেহি শিল্পে দেহি শুভাং মতি। ধনং দেহি যশো দেহি বিশ্বকৰ্ম্মণ প্রসীদ মে৷৷ ২৷৷
আবার প্রনাম করে বিশ্বকর্মার চরণে বা ঘটে পুষ্পাঞ্জলি দিবেন, তারপর আবার ফুলচন্দন দূর্বা তুলসী পাতা বেলপাতা হাতে করে নিয়ে হাতজোড় করে তৃতীয় মন্ত্রটি পাঠ করবেন।
শিল্পাচার্য্যং নমস্তুভ্যং নানালঙ্কার ভূষিতম্। মম বিঘ্নবিনাশায় কল্যাণং কুরু মে সদা ৷৷ ৩৷৷
এইভাবে বিশ্বকর্মার চরণে বা ঘটে তিনবার পুষ্পাঞ্জলি অর্পণ করবেন এবং তারপর ভগবান বিশ্বকর্মার প্রনাম মন্ত্র পাঠ পূর্বক প্রণাম করবেন। বিশ্বকর্মার প্রনাম মন্ত্র জানার জন্য আমাদের প্রনাম মন্ত্র চেক করুন অথবা এখানে ক্লিক করুন।
শেষে দক্ষিনান্ত করিয়া বিসর্জন করিবেন। এবং শান্তি জল ছড়া দেবেন সকলের মাথায়।
ভারতশাস্ত্র এর সমস্ত আপডেট এখন GNews, Facebook এবং Telegram – পেয়ে যাবেন। Google Play Store এও আমাদের উপলব্ধ রয়েছে Bharatsastra App