শিবরাত্রি ব্রত – Shibratri Brotokotha

শিবরাত্রি ব্রত – Shibratri Brotokotha

শিবরাত্রি ব্রতের সময় বা কাল- ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশী তিথিতে সারা রাত জেগে চার প্রহর ধরে শিবরাত্রি ব্রত পালন করার নিয়ম। পুরুষ ও স্ত্রী লোক সকলেই ব্রত করতে পারে।

শিবরাত্রি ব্রতের দ্রব্য ও বিধান- গঙ্গা মাটি, বেলপাতা, ফুল, দুধ, দই, ঘি, মধু আর কলা। শিবরাত্রির আগের দিনে নিরামিষ খেয়ে থাকতে হয়। রাত্রিরে বিছানায় না শুয়ে, কম্বল কিংবা খরের বিছানায় সংযমী হয়ে শোয়ার নিয়ম।

শিবরাত্রির দিন সকালে স্নান করে বেল পাতা তুলে রাখতে হবে। এরপর সমস্ত দিন উপোস করে থেকে গঙ্গা মাটি দিয়ে চারটি শিবলিঙ্গ তৈরি করে রাত্রিরে চার প্রহর চারবার শিব পুজো করতে হয়।

যেমন- প্রথম প্রহরে দুধ দিয়ে শিবলিঙ্গ কে স্নান করিয়ে শিব পুজো করার নিয়ম।
দ্বিতীয় প্রহরে দই দিয়ে শিবলিঙ্গ কে স্নান করিয়ে দ্বিতীয় প্রহরে ঘি দিয়ে শিবলিঙ্গ

কে স্নান করিয়ে আর চতুর্থ প্রহরে শিব লিঙ্গে মধু দিয়ে স্নান করে পুজো করাতে হবে। এইভাবে প্রত্যেক প্রহরেই শিব পুজো করতে হবে। এই সঙ্গে সমস্ত রাত্রি জেগে কাটাতে হয় এবং পরদিন প্রভাত হলে

প্রথম কথা শুনে শিবকে প্রণাম করে ব্রাহ্মণ কে পরিতোষ সহকারে জলযোগ এবং ভজন করিয়ে দক্ষিণা দেওয়ার কর্তব্য।

শিবরাত্রি ব্রত কথা- পুরাকালের কথা-একদিন কৈলাস পর্বতে হরো পার্বতী বসে বিশ্রাম করছিল, এমন সময় দেবী পার্বতী বললেন,”প্রভু! ধর্ম ,অর্থ, কাম ও মোক্ষ লাভের জন্য কি কাজ বা ব্রত পালন করলে আপনাকে সন্তুষ্ট করা যায়?”

সেই প্রশ্ন শুনে মহাদেব তখন বললেন,”শোনো দেবী পার্বতী, ফাগুন মাসের শুক্লপক্ষের চতুর্দশী তিথি অন্ধকার রাত্রিকে ‘শিবরাত্রি ‘ বলে। সেইদিন যে উপোস করে থাকে, আমি যথার্থই তার উপর প্রসন্ন হয়।

শিবরাত্রি ব্রত আমার খুব প্রীতিকর, এই ব্রতের গুণেই গণেশ সপ্তদ্বীপ এর অধীশ্বর হয়েছে। এখন এই তিথির মাহাত্ম্য বলছি শোনো। পুণ্যতীর্থ কাশিনগরের এক ব্যাধ বাস করত। বদ করাই ছিল তার কাজ।

একদিন সে তীর-ধনুক নিয়ে স্বীকার করতে বেরুলো। একটা বনে গিয়ে সে অনেক রকমের পশুপাখি স্বীকার করল। সে যখন শিকার জড়ো করে বাড়িতে ফিরছিল তখন সে দেখল তার মাংসগুলো খুব ভারী হয়ে গেছে সেগুলো তার

একার পক্ষে বয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। তখন সে সে গুলোকে নিয়ে বোনের একটা গাছের তলায় রেখে একটু বিশ্রাম করতে লাগলো। খুব ক্লান্ত হয়ে থাকার দরুন কিছুক্ষণের মধ্যেই সে গভীরভাবে ঘুমিয়ে পড়ল।

সূর্য ডুবে যাওয়ার অনেকক্ষণ পর তার ঘুম ভাঙলো, তখন সে দেখল যে, এখন সেখানে বসে থাকতে সাপ কিংবা বাঘ ভাল্লুকের হাতে তার প্রাণ যেতে পারে। এই অন্ধকারে পথ চিনে কুটিরের ফেরাও এখন সম্ভব নয়।

তখন সে হাতরে হাতরে সেই গাছটার ওপরে মাংসের বোঝাটা নিয়ে উঠে পড়ল এবং মাংসের বোঝাটা গাছের লতাপাতা দিয়ে একটা ডালে বেঁধে রেখে কোনরকমে গাছে বসেই রাত কাটাবে ঠিক করল।

একে সে খিদের জ্বালায় অস্থির তার ওপর শিশির পড়তে থাকায় শীতে তার কাঁপুনি ধরল, কাজেই সে জেগে বসে রইল সারা রাত। সেটা ছিল বেল গাছ আর ঘটনাচক্রের আমার একটা লিঙ্গ মূর্তি ও ছিল সেই গাছের তলায়।

সেদিন ছিল শিবরাত্রি তিথি আরও ব্যাধ ও সারাদিন উপোসী ছিল। তার নড়াচড়াতে গাছের কয়েকটা পাতা শিশিরে ভিজে তার গা বেয়ে এসে পড়ল সেই শিব লিঙ্গের মাথায়।

যদিও শিবরাত্রি ব্রতের নিয়ম পালন করার জন্য তার পক্ষে স্নান করা আর পূজার নৈবেদ্য দেওয়া মোটেই সম্ভব ছিল না, কিন্তু আমি পেলুম কেবল বেলপাতা।

তবুও চতুর্দশী তিথি মাহাত্ম্যের গুনে সে পেল মহাফল, অথচ সে এব্যাপারে কিছুই জানত না। সকাল হতেই সে ফিরে গেল তার কুটিরে।

বেশ কিছুকাল পরে তার মৃত্যু হল, কখন যমদূত আর আমার দূতেরা ও তার কাছে গিয়ে হাজির হলো। তাকে আমার কাছে আনা হবে না বেঁধে যমরাজের কাছে নিয়ে যাওয়া হবে এই

নিয়ে যমদূত দের সঙ্গে আমার দূত দের খুব ঝগড়া বাঁধলো। শেষে শিব দূতেরা যমদূত দের পরাস্ত করে ব্যাধকে আমার কাছে নিয়ে এলো। জম এই ব্যাপার সব জানতে পেরে আমার কাছে আসছিল,

পথে নন্দী কে দেখে ব্যাধের সারা জীবন ধরে কুকর্মের কথা বলল। নন্দী ও যমকে ব্যাধের শিবরাত্রির ঘটনার কথা সমস্ত বলে আরও বলল যে,

সে শুধু কুকর্ম করেছিল তাতে কোন সন্দেহ নেই-সে মহা পাপী ও ছিল, কিন্তু শিবরাত্রি ব্রতের ফলে সে শিবলোক লাভ করেছে। যম সব শুনে সন্তুষ্ট হয়ে নিজের পুরীতে ফিরে গেল।

দেখলে পার্বতী, এই ব্রথের শক্তি কতটা?”সেই থেকে পৃথিবীতে এই ব্রতের মাহাত্ম্য চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ল।

শিবরাত্রি ব্রতের ফল – শিবরাত্রি ব্রত পালন করলে মানুষের ধর্ম, অর্থ ,কাম ও মোক্ষএই চার রকম ফল লাভ হয়ে থাকে।।

আরও পড়ুন— শিবের প্রণাম মন্ত্র

সুয়ো দুয়োর ব্রতকথা,  শীতল ষষ্ঠীর ব্রত Sital Sosthi Brotokotha, পাটাই ষষ্ঠীর ব্রতকথা

ভারতশাস্ত্রের সমস্ত আপডেট এখন টেলিগ্রামে (Join Telegram)

Leave a Comment