ইতুপূজা ব্রতকথা : Itu Puja brotokotha

ইতুপূজা ব্রতকথা : Itu Puja Baratakatha

অগ্রহায়ণ মাসের প্রত্যেক রবিবার এই পুজো করে অগ্রহায়ণের সংক্রান্তির দিন পুকুর, নদী বা গঙ্গায় ইতু বিসর্জন দিতে হয়। কুমারী ও সধবা সকলেই এই ব্রত করতে পারে।

সিঁদূর, ফুল, দূর্বা, বেলপাতা, তিল হরিতকী, ধূপ, দীপ, নৈবেদ্য, সেঁয়াকুল এবং ফল। কার্তিক মাসের সংক্রান্তির দিন, একটি বেশ পরিষ্কার সরার মাঝখানে ঘট বসিয়ে তার চারিদিকে ধান, হলুদ, মান ও কচু গাছ একটা করে বসাতে হবে।

এই সঙ্গে মটর, সরষে, শুষনী, কলমী আর পাঁচটি ছোট বটের ডাল দিতে হয়। পুজোর শেষে নীচের লেখা মন্ত্রটি বলে ঘটে প্রণাম করার নিয়ম।

মন্ত্র যথা –

অষ্ট চাল অষ্ট দূর্বা কলস্ পাত্রে থুয়ে। শুন একমনে ইতুর কথা সবে প্রাণ ভরে ॥

ইতু দেন বর। ধন-ধান্যে, পুত্র-পৌত্রে বাড়ুক তাদের ঘর ॥

কাঠি-কুটি কুড়াতে গেলাম। ইতুর কথা শুনে এলাম ।

এ কথা শুনলে কী হয়।

নির্ধনের ধন হয়। অপুত্রের পুত্র হয়।

অশরণের শরণ হয়।

অন্ধের চক্ষু হয়, আইবুড়োর বিয়ে হয়, অন্তিম কালে স্বর্গে যায়।।

অগ্রহায়ণ মাসের প্রত্যেক রবিবার এই পুজো করে অগ্রহায়ণের সংক্রান্তির দিন পুকুর, নদী বা গঙ্গায় ইতু বিসর্জন দিতে হয়। যে কোনো একজন উপোসী থেকে ইতুর কথা শুনবে। একজন কথা বলবে অপর জন কথা শুনবে।

ইতুপূজা ব্রতকথা—এক রাজ্যে এক খুব গরীব বামুন -বামনী বাস করত। তাদের উমনো আর ঝুমনো নামে দু’টি মেয়ে ছিল। একদিন বামুনের খুব পিঠে খাবার ইচ্ছে হওয়ায় সে সব জিনিস যোগাড় করে নিয়ে এল,

বামনী রাত্তির বেলায় পিঠে করতে লাগল আর বামুন রান্নাঘরের পেছনে চুপ করে বসে পিঠে গুণতে লাগল। এরপর বামুনকে খেতে বসিয়ে বামনী যখন পরিবেশন করছে তখন বামুন বলল, “দু’খানা পিঠে কম হল কেন?” বামনী বলল যে, সে তার মেয়ে দু’টিকে দু’খানা পিঠে দিয়েছে।

এই কথা শুনে বামন খুবই রেগে গেল কিন্তু কিছু বলল না। এরপর একদিন সকাল বেলা বামুন বাসনীকে বলল, আজ উম্‌নো-ঝুম্‌নোকে ওদের পিসির বাড়ি রেখে আসব। পিসির বাড়ি থাকলে দুটো খেতেও পাবে আর পরে ওখান থেকেই ওদের বে-ধারও ব্যবস্থা হতে পারবে।

আমার বোনের অবস্থা তো খুব ভাল—আমিই এতদিন অভিমান করে যাইনি। বামনী খুশী না হলেও মুখে কিছুই বলতে পারলো না। বামুন উম্‌নো-ঝুম্‌নোকে নিয়ে বাড়ি থেকে রওনা হল। অনেকখানি হাঁটার পর বেলা প্রায় দুপুরে বামুন মেয়ে দু’টিকে নিয়ে একটা বনের মধ্যে ঢুকলো।

মেয়ে দু’টি খিদে-তেষ্টায় খুবই কাতর হয়ে পড়েছিল, তারা আর বসে থাকতে পারল না, একটি বটগাছের ছায়ায় তাদের বাবার কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ল। বামুন এইটাই চাইছিল, সুযোগ দেখে সে ইটের ওপর মেয়ে দু’টির মাথা রেখে চুপি চুপি পালিয়ে গেল। যাবার সময় কয়েকটি শামুক ও গুলি ভেঙ্গে তাতে আলতা মাখিয়ে ছড়িয়ে রেখে গেল।

মেয়ে দু’টির ঘুম ভাঙ্গতে দেখল যে—তাদের বাবা সেখানেই নেই আর চারিদিকে খানিক রক্ত ছড়িয়ে রয়েছে। উমনো তখন ঝুমনোকে বলল, “বাবাকে বোধহয় বাঘে খেয়েছে।” ঝুম্‌নো বলল, “না না, আমরা যে দু’খানা পিঠে লুকিয়ে খেয়েছিলুলম, তাই বাবা রাগ করে আমাদের পিসির বাড়ি রেখে আসার নাম করে বনে ফেলে চলে গেছে। পিসি বলতে কোনো কালেই আমাদের কেউ নেই।”

এই ভয়ানক, বনের মধ্যে তাদের খুব ভয় করতে লাগল। দু’জনেই চোখের জলে ভাসতে লাগল— কোথায় বা তারা যাবে, তাও ঠিক করতে পারল না। এমন সময় দূরে বাঘের গর্জন শোনা গেল।

বাঘের গর্জন শুনে তার ভয়ে আর আড়ষ্ট হয়ে উঠল , এবার বুঝি তাদের বাঘের পেতে যেতে হবে! তারা তখন ভয়ে ঠকঠক করে কাঁপছে, এমন সময় উমনো বলে উঠল, ” ঝুমনো দি , ঐ দূরে একটি খুব বড় বটগাছ দেখা যাচ্ছে, চলো আমরা ওখানেই আশ্রয় নিই।”

উমনোর কথা শুনে দুজনে ছুটে গেল সেই বট গাছের কাছে। দুজনেই বট গাছের সামনে হাত জোর করে বলল, “বাবা বতরূপী নারায়ণ, আমরা ভয়ানক বিপদে পড়েছি, ঐ শোনো দূরে বাঘের গর্জন – বাঘটা এসে এখুনি আমাদের খেয়ে ফেলবে – তুমি আমাদের আশ্রয় দিয়ে বাচাও।”

উমনো-ঝুমনোর এই কাতর কথা শুনে বট গাছটি তখন দু ফাঁক হয়ে গেল, উমনো ঝুমনো তার সেই কোটরের মধ্যে ঢুকে গেল। আর সঙ্গে সঙ্গে কোটরটা বন্ধ হয়ে গেল।

বাঘটা কাছে এসে মানুষের গন্ধ পেয়ে চারপাশে খানিকটা ঘোরাঘুরি করে সেখান থেকে চলে গেল। বাঘটা চলে যেতেই বটগাছটি আবার দু ফাঁক হয়ে গেল আর উমনো ঝুমনো কোটরের মধ্যে থেকে বেরিয়ে এল।

এখন তার কি করবে কোথায় যাবে কি করবে ভাবতে ভাবতে জঙ্গলের মধ্যে চলতে লাগলো। বেশ কিছুদূর যাওয়ার পর তার জনবস্তি দেখতে পেল। বন তখন তার পেরিয়ে এসেছে। তার একটু দূরে দেখল যে তাদের বয়সী কয়েকজন মেয়ে একটা পুকুরের পারে ঘট বসিয়ে কি সব পূজা করছে।

উমনো ঝুমন তাদের কাছে দাঁড়াতেই সঙ্গে সঙ্গে তাদের পুজোর ঘট গুলি সব উল্টে পড়ে গেল। সেই মেযেগুলো তখন খুব রেগে গিয়ে বলল ” কথা থেকে অলক্ষ্মী তোমরা এলে যে – আমাদের ইতু পূজার ঘট গুলি সব উল্টে পাল্টে গেল।”

উমনো – ঝুমনো তখন খুব কাঁদতে কাঁদতে তাদের দুখের কথা গুলো সেই সব মেদের কাছে বলতে লাগলো। সব কথা দুই বোনের কাছ থেকে সোনার পর মেয়ে গুলোর তাদের প্রতি দয়া হল।

তখন তারা বলল উমনো ঝুমনো কে বলল, “তোমাদের কোন ভয় নেই, কাঁদতে ও হবেনা তোমরা আমাদের মত ইতু পূজা করো তাহলে তোমাদের আর কোন দুখ থাকবেন।

যাও এখন তোমরা ঐ পুকুর থেকে স্নান করে এসো।” সেই মেয়েদের কথা মত উমনো ঝুমনো  যেই পুকুরে নেমেছে অমনি পুকুরের সব জল শুকিয়ে গেল ও পুকুরের মাছ গুলো ছটফট করে লাফাতে লাগলো।

উমনো ঝুমনো এই ব্যাপার দেখে কাঁদতে কাঁদতে আবার মেয়ে গুলর কাছে ফিরে এসে সব কথা বলল। মেয়েরা বলল এই নও ঘটের দুর্ববা দিচ্ছি, নিয়ে পুকুরে গিয়ে ফেলো।” ওদের কথা মত  উমনো ,ঝুমনো দুর্ববা গুলি নিয়ে পুকুরে গিয়ে ফেলতেই আবার পুকুর জলে ভরে গেল। তখন তারা দুজনে পুকুর থেকে স্নান করে এল । স্নান  করে ফিরে এসে  মেয়ে দুটি  তাদের  ঘট  আর দূর্বা দিয়ে ইতু পূজা  সম্পূর্ণ করল । পুজোর পর দুই মেয়ে বলল ,”এই বার ইতুর কাছে বর চেয়ে নাও ।’

উমনো -ঝুমনো তখন ইতুর কাছে বর চাইল -”ইতু দেবি !এই বর দাও ,যাতে আমাদের বাবা -মায়ের দুখ দূর হয় ,আর ঘর ভর্তি সোনা -দানা ও টাকা -কড়ি হয়। ”তারপর মেয়ে দুটি বলল ,”এইবার তোমরা খুব ভক্তি করে ঘট নিয়ে বাড়ির দিকে যাও ।” তখন ঘট নিয়ে উমনো -ঝুমনো বাড়ির দিকে চলে গেল । ইতু দেবিই তাদের পথ দেখিয়ে দিলেন ।

এ দিকে উমনো -ঝুমনোর বাবা- মা ইতুর বরে রাজার মত ধনবান হল । দুই বোন ক্রমে ঘট হাতে করে বাড়িতে এসে পছল । তাদের বাবা -মা ভেবেছিল যে ,এতদিন মেয়ে দুটিকে অবশই বাঘে খেয়ে ফেলেছে ।

আর ওদের আপদ দূর হয়েছে । এমনি সময়  হঠাৎ উমনো ঝুমনোকে বাড়ি ফিরতে দেখে তাদের বাবা অবাক হয়ে বলল ,”তোরা এতদিন বেঁচেছিলি ?কোথা থেকে ফিরে এলি এখন ?মরিস নি তোরা ?”

উমনো বলল, ”বাবা !আমরা যদি মরতুম তাহলে আজ তোমরা এত বড় লোক হতে পড়তে না । আমরাই ইতু পুজো করে মা কে সন্তষ্ট করে তোমার রাজ্য হওয়ার বর চেয়েছিলুম -তাই তুমি আজ এত বড় লোক হতে পেরেছো । ”

তখন তাদের বাবা মা তাদের আদর করে ঘরে নিয়ে গেল । বমনীও তাদের কথা শুনে ইতু পূজা আরম্ভ করল । বছর কয়েক পরে বামন – বামনীর সুন্দর ফুটফুটে পুত্র সন্তান জন্ম নিল । তখন তাদের আনন্দ আর ধরেনা । ধন , ঐশ্বর্য ও ছেলে পেয়ে , মেয়ে দের নিয়ে তারা মনের সুখে  ঘর সংসার করতে লাগল ।

এই ভাবে কিছুদিন কেটে যাবার পর একদিন এক রাজপুত্র কোটাল পুত্র দুই বন্ধু মিলে অনেক লোকজন সঙ্গে নিয়ে বামুনের বাড়িতে এসে হাজির হল । বেলা তখন দুপুর ,তাঁরা তখন খিদে তেষ্টায় অস্থির । রাজপুত্র এসে সামনে উমনো কে দেখে বললেন “আমাদের খুব তেষ্টা পেয়েছে, আমাদের একটু জল খাওয়াতে পর ?” উমনো তক্ষুনি ছুটে গিয়ে একটা ছোট্ট ভাঁড়ে করে জল এনে দিল।

এক ভাঁড় জল খেয়ে রাজপুত্রের খুব ভয়ানক রাগ হল, কিন্তু কি আর করবেন, ভাবলেন যেটুকু জল পাওয়া গেছে, সেই টুকুই এখন খেয়ে নেওয়া যাক। এইভেবে রাজপুত্র ভাঁড় টি মুখে তুলে জল খেতে আরম্ভ করলেন। কিন্তু কি আশ্চর্য, যত জল ক্ষণ ভাঁড়ের জল আর কিছুতেই ফুরায় না।

তখন তিনি তার লোক লস্কর সকলকে সেই ভাঁড়ের জল খেরতে দিলেন, তারাও রান ভরে জল ,খেল তবুও ভাঁড়তের জল যেমন ছিল তেমনি রইল। তখন সকলে উমনোকে ধন্য ধন্য করতে লাগলো। রাজপুত্র উমনোকে বললেন তার বাবাকে ডেকে আনতে। ,উমনো গিয়ে বামুন কে ডেকে আনলো।

রাজপুত্র বামুনকে বললেন “আপনার মেয়েটি বড় ভাল আমি মদ্র দেশের যুবরাজ, যদি আনার কোনোম আপত্তি না থাকে তাহলে আমি আনার এই মেয়েটি কে বিয়ে করতে চাই।” বামুন তখন বললেন , ” আপত্তি আমার কিছু নেই তবে আমার আর একটি মেয়ে আছে, তারও  এখন বিয়ে হয়নি।” যুবরাজ বললেন ” আমার সঙ্গে আছে কোটাল পুত্র আমার বন্ধু। আপনি ইচ্ছে করলে আমাদের দুইজনকে দুই মেয়ে দান করতে পারেন।”

বামুন দেখে চমত্কার সুযোগ সে আর দেরি করলনা, গধূলি লগ্নে উমনোর সঙ্গে যুবরাজের আর কোটাল পুত্রের সঙ্গে ঝুমনোর বিয়ে দিয়ে দিল। অরের দিন উমনো ঝুমনো শ্বশুর বাড়ি যাওয়ার সময় বামনী বললেন “তোরা কি খেয়ে শ্বশুর বাড়ি যাবি” উমনো বলল

“আমি এখন রাজার রানী দাদ খনি চলের ভাত আর মাগুর ম্যাচের ঝোল ভাত করে রেঁধে দাও, আমি তাই খেয়ে পান চিবুতে চিবুতে হাতির পিঠে বসে শ্বশুর বাড়িতে যাব। আর ঝুমনো বলল “আজ অগ্রহায়ন মাসের রবিবার, ফলমূল নিরামিষ খেয়ে ইতুর ঘট মাথায় নিয়ে আমি হাতির পিঠে চড়ে শ্বশুর বাড়ি যাব।”

শেষ পর্যন্ত দুই বোনের খাওয়ার দুইরকম ব্যবস্থা হল। তারা খেয়ে দিয়ে যে যার স্বামীর সঙ্গে হাতির পিঠে চড়ে শ্বশুর বাড়িতে রওনা হল। উমনো যে পথ দিয়ে যেতে লাগলো সেখানে তাদের সামনে পড়ল গৃহ দাহ, মড়ক, দুর্ভিক্ষ ও যত সব অমঙ্গলের চিহ্ন। আর ঝুমনো যে পথ দিয়ে যেতে লাগলো দেখতে পেল বিয়ে, সভা সমিতি, অন্ন প্রাশন ও অন্যান্য পূজা পার্বণ।

এইভাবে উমনো যবরাজের সঙ্গে রাজার বাড়িতে এসে হাজির হল। রনি মা ওদের আসবার খবর বয্ব বউ বরণ করতে এলেন। কিন্তু বউ যেমনি হাতি থেকে নামলো তেমনি রাজার বাড়ির সিংহ দরজা তা হুড়মুর করে ভেঙে পড়ল,

যুবরাজের মা অনেক বোকা ঝক করে বোউকে ঘরে তুললেন। এইদিকে কোটাল পুত্রের মা বউ বরণ করতে এসে দেখলেন তাদের বাড়ির লোহার গরদ গুলো সব সোনার হয়ে গেছে। কোটাল পুত্রের মা বোউকে কোলে করে আদর করে ঘরে তুললেন।

উমনো রাহবাড়িতে আসার পর মদ্র যুবরাজের ধন ঐশ্বর্য বিষয় সম্পত্তি সব ক্রমে ক্রমে কোথায় চলে গেল। যুবরাজ একেবারে ভিখারী হয়ে পড়লেন। আর ঝুমনো কোটলের বাড়িতে আসার পর থেকে কোটলের বাড়ি ধন এশ্বর্য পরিপূর্ণ হয়ে সংসার

একেবারে উতলে পড়তে লাগলো, সারা দেশে প্রচার হয়ে গেল যে কোটাল পুত্র এক খুবই সুলক্ষণ যুক্ত মেয়ে বিয়ে কে এনেছে। তাদের এখন সব দিকে বার্বারন্ত। মদ্র যুবরাজ উমনোকে অলক্ষী ভেবে নিয়ে তার উপর খুবই চোটে গেলেন, উমনো তার সামনে এলে তাকে দূর দূর করে তাড়িয়ে দিতে লাগলেন। শেষ একদিন ঘাতক ডেকে বললেন এই দণ্ডেই উমনোকে কেটে তার রক্ত এনে ম আমাকে দেখাও।

ঘাতক যুবরাজের হুকুমে উমনোকে মশানে নিয়ে গিয়ে ছেড়েদিল, আর একটা শিয়ালকে কেটে এনে তার রক্ত যুবরাজে কে দেখাল। উমনো তখন ঝুমনোর কাছে গিয়ে সবটাই খুলে বলল।

মায়ের পেটের বোনের এই রকম দুর্গতির কথা শুনে ঝুমনো কাউকে জানতে না দিয়ে তার বনে তার বাড়িতে লুকিয়ে রাখল। এমন কি তার স্বামী কোটাল পুত্র ও জানতে পারলেন না ঝুমনো বুঝল যে তার বোন ইতুর অসম্মান করেছে তাই সে আজ এই বিপদে পড়েছে।

তখন থেকে ঝুমনো আবার উমনোকে নিয়ে ঠিক নিয়ম মত ইতু পুজো করতে লাগলো। শেষে ইতু দেবী আবার উমনোর উপর সন্তুষ্ট হলেন। সঙ্গে সঙ্গে যুবরাজের দিন দিন বার্বারন্ত হতে লাগলো। যুবরাজ একদিন স্বপ্নে দেখলেন যে, এক দেবী তাকে বলছেন “এখুনি উমনো রানীকে খুঁজে বাড়িতে না নিয়ে এলে তর সর্বনাশ হয়ে যাবে”। মদ্র যুবরাজ স্বপ্ন দেখার পর থেকে খু বই চিন্তায় পড়লেন।

তিনি তো জানতেন যে ঘাতক উমনকে কেটে ফেলেছে। শেষে যুবরাজ কোটাল পুত্রকে ডেকে এনে স্বপ্নের কথা জানালেন। কোটাল পুত্র তখন ঘাতক কে ডেকে উমনোর কথা শুনলেন এবং খুব ভাবতে ভাবতে বাড়ি তে চলে গেলেন।

কোটাল পুত্র উমনো আর যুবরাজ এর জন্য খুব দুঃখ করতে লাগলেন। ঝুমনো স্বামীর এই রকম চিন্তার কারণ জিজ্ঞেস করে উমনোর ব্যাপারে জানতে পারল।

তখন সে তার স্বামী কে বলল ” মা ইতুদেবির আশীর্বাদে যুবরাজ আবার উমনকে ফিরে পেতে পারেন যদি আমার কথা মত কাজ করেন। তুমি যুবরাজকে বল যে আমাদের বাড়ি থেকে তাঁর বাড়ি পর্যন্ত কলাগাছ পুঁতে

তাঁবু ফেলে যদি কড়ির জাঙ্গাল দিয়ে দিতে পাড়েন তাহলে আবার উমনকে ফিরে পেতে পারেন।” কোটাল যুবরাজকে সেই কথা বলল। যুবরাজ উমনকে পাওয়ার আশায় সমস্ত ব্যবস্থাই করে দিলেন। ঝুমনো তখন উমনকে রাণীর সাজে সাজিয়ে তাঁবুর মধ্যে দিয়ে রাজবাড়িতে পাঠিয়ে দিল। উমনোর চলার ওঠে দুর্বার শিকড় পড়েছিল সেই দুর্বার শিকড়ে লেগে উমনোর প কেটে গেল।

যুবরাজ এটাতে খুবই রেগে গিয়ে হুকুম দিলে এই দণ্ডে আঠারো হাঁড়ির মাথা আর তাদের বুড়ি মাযের চোখ দুটো উপরে অন হক। যুবরাজের বলার সঙ্গে সঙ্গেই হুকুম মত কাজ করো হল। যুবরাজ উমনকে নিয়ে রাজবাড়িতে ঢুকলেন। তারপর অগ্রহায়ন মাসে উমনো ইতুপুজো করল কিন্তু ইতুর কথা সুনবর মত রাজবাড়িতে কোন স্ত্রীলোক পেলনা।

উমনো তখন যুবরাজকে বলল য়ে একজন উপসি স্ত্রীলোক চাই, যে ইতুর কথা সংবে। যুবরাজ তখনই লোক পাঠালেন, রাজ্যের মধ্যে যে স্ত্রীলোক উপসি আছে টেক রাজবাড়িতে নিয়ে আসার জন্য।

রাজবাড়ির লোক ছুটল চারিদিকে কিন্তু রাজ্যে কোন উপসি মেয়ে পেল না। শেষে তার সেই বুড়ি হাঁড়িনীকে জেনে ধরে আনলো। সে কিছুতেই অসবেনা-সে বলতে লাগলো “ঐ অলক্ষ্মী রাক্ষসীর জন্য আমার আঠারো ছেলের মাথা গেল আর আমি অন্ধ হয়ে গেলুম-আমি কিছুতেই সেখানে যাবনা।”

যায় হক রাজবাড়ির লোকের তাকে জোর ধরে আনলো। সে উমনোর কাছে আসতেই উমনো তাকে বলল “বুড়িমা, তোমার কোন ভয় নেই, তুমি আমার ইতুর কথা শোনো, আবার তোমার সব হবে।”

বুড়ি তখন তার আঠারো ছেলের আর তার চোখ ফিরে পাওয়ার জন্য বর চাইল। মা ইতু লক্ষ্মীর আশীর্বাদে তাই হল। বুড়ি তার আঠারো ছেলেকে আর নিজের চোখ ফিরে পেল। এরপর হাঁড়িনী চারিদিকে বলে বেড়াতে লাগলো যে রাণী মা উমনোর ইতু লক্ষ্মী পুজোর কথা শুনে সে আবার তার সব ফিরে পেয়েছে। তখন থেকে গোটা দেশ বাসী সকলে ইতুর পুজো করে আনন্দে বসবাস করতে লাগলো।

ইতু লক্ষ্মী ব্রতের ফল -এই ইতু ব্রত পূজা করলে মেয়ের যথার্থ সুখ-সম্পদের অধিকারিণী ও স্বামীর প্রিয়া হয়ে থাকেন।

পড়তে থাকুন –  নীলষষ্ঠী ব্রতকথা 

ভারতশাস্ত্রের সমস্ত আপডেট এখন টেলিগ্রামে Join Telegram

 

Leave a Comment