মনোরথ দ্বিতীয়া ব্রত

মনোরথ দ্বিতীয়া ব্রত

মনোরথ দ্বিতীয়া ব্রতের দ্রব্য ও বিধান

ফুল, তুলসী ,দূর্বা, দীপ, ধূপ ,বিষ্ণুর নৈবেদ্য আতপ চাল, মিষ্টান্ন, ফল, ভুজ্যি একটি ,দক্ষিণা। মনোরথ দ্বিতীয়া ব্রত পালন করা খুবই কঠিন কারণ শরীর খুব ভালো না থাকলেই মনোরথ দ্বিতীয়া ব্রত পালন করা সম্ভব হয় না।

দিনের বেলা পুরোহিত কে দিয়ে বিষ্ণু পূজা করিয়ে সারাদিন উপোস করে থাকতে হবে। তারপরে রাত্তিরে চাঁদ উঠলে সেই চাঁদ দর্শন করে, তাঁকে অর্ঘ্য দেওয়া কর্তব্য।

শেষের দুধ ও ফল খেয়ে কম্বল বা খড়ের বিছানায় একলা শয়ন করে রাত কাটান নিয়ম। পরে সকালে উঠে স্নান করে পুরোহিত কে ভুজ্যি আর দক্ষিণা দিয়ে ব্রত শেষ করায় বিধি।

মনোরথ দ্বিতীয়া ব্রতকথা

অনেক দিন আগেকার কথা, যমুনা নদীর উপরে একটি ছোট রাজ্যের রাজা ছিলেন সুদেব বর্মন। কৃষ্ণাবতি নামে তার একটি মাত্র মেয়ে ছিল, কিন্তু তার শরীর মোটেই ভালো ছিল না।

সে প্রায়শই রোগে ভুগত। শেষে তার বাঁচার আশা ক্রমে ক্ষীণ হয়ে এলো। রাজা খুব চিন্তিত হলেন। শেষে যখন দেখলেন যে, তাকে বাঁচানো প্রায় অসম্ভব, তখন তিনি সারা রাজ্যে ঘোষণা করে দিলেন যে, তার মেয়েকে যে সারিয়ে দিতে পারবে ,তাকে অনেক ধনরত্ন দিয়ে তার সঙ্গে তার মেয়ে কৃষ্ণাবতির বিয়ে দেবেন।

যমুনা নদীর এপারে এক সওদাগর থাকতো, তার অনেক সম্পত্তি ছিলএবং একটি ছেলে ছিল। ছেলেটির নাম শশাঙ্ক কুমার। শশাঙ্ক কুমার এক সময়ে কৃষ্ণা বতি কে দেখে মনে মনে প্রেমে পড়ে গিয়েছিল ও তাকে বিয়ে করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিল। এমন কি সে রাজার কাছে গিয়ে কৃষ্ণা বতি কে বিয়ে করার কথা ও জানিয়েছিলেন।

রাজা কিন্তু এতে খুব অসসন্তুুষ্ট হয়ে শশাঙ্ক কুমারের বাবাকে জানিয়ে দিয়েছিলেন যে, তার মেয়েকে ছেলের বউ করার আশা তিনি যেন না করেন ,কারণ এত বড় আশা তার পক্ষে পাগলামি ছাড়া আর কিছু নয়। এই কথা শোনার পর শশাঙ্ক কুমারের মন খুবই খারাপ হয়ে গেল।

সে তার খাওয়া দাওয়া ও প্রায় ত্যাগ করে দিয়েছিল। সে শুধু জোছনা রাত্রিরে চাঁদের দিকে চেয়ে চেয়ে কৃষ্ণাবতি কে পাওয়ার কথাই ভাবতো। এই ভাবেই তার দিনের পোর দিন যায়।

এরই মধ্যে এক দিন পূর্ণিমা রাত্রিরে সে ছাদের উপর ঘুমিয়ে পড়েছিল, এমন সময় সে স্বপ্ন দেখল যে স্বয়ং চাঁদ এসে তাকে বলেছেন,’তুই আর বৃথা চিন্তা ভাবনা করিস না,

তোর আশা নিশ্চয়ই পূর্ণ হবে। তুই ছদ্ম বেশ ধারণ করে কাল রাত সভায় উপস্থিত হয়ে রাজাকে বলবি যে, তুই কৃষ্ণাবতীর রোগ সারিয়ে দিতে পারবি।

পরে সন্ধ্যার সময় আমার পুজো করে সেই পুজোর প্রসাদ কৃষ্ণাবতি কে খাইয়ে দিবি। এই পুজোর প্রসাদ খাওয়ার পরেই তার রোগ সেরে যাবে।

পরের দিন শশাঙ্ক কুমার উপোস করে ছদ্ম বেশ ধারণ করে রাজ সভায় গিয়ে রাজাকে জানালো যে, রাজ কন্যাকে সে ভালো করে দেবে।

রাজা এতে সম্মত হতে ঠিক হল যে শশাঙ্ক কুমারের কথা মতো আসছে আষাঢ় মাসে শুক্লা পক্ষে দ্বিতীয়া তিথিতে মনোরথ দ্বিতীয়া ব্রত পুজো অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা হবে।

আসার মাসের এই শুক্ল পক্ষের তৃতীয়ার দিন আসতে সসংখ কুমার উপোস করে থেকে বিষ্ণুর পুজো করলে এবং রাত্তিরে চাঁদকে অর্ঘ্য দিয়ে সেই প্রসাদ কৃষ্ণাবতিকে খাইয়ে দিল।

নিজে ও সে ফল মূল ও দুধ খেয়ে রাত কাটালো। পরের দিন রাজা দেখলেন যে, কৃষ্ণাবতীর রোগ যেন অর্ধেক সেরে গেছে।

রাজা দেখে খুব খুশি হলেন, ব্রাহ্মণ ও পণ্ডিতের প্রচুর ধন রত্ন দান করলেন। পরে রাজা জানতে পারলেন যে, শশাঙ্ক কুমারই কৃষ্ণা বতীর রোগ মুক্ত করেছে।

তখন খুব সমারো হোক আর উৎসব আনন্দের মধ্যে শশাঙ্ক কুমারের সঙ্গে কৃষ্ণাবতির বিয়ে দিলেন, সেই সঙ্গে শশাঙ্ক কুমারকে রাজ্যের যুবরাজ উত্তরাধিকারী হিসেবে ঘোষণা ও করে দিলেন।

তারপর থেকে শশাঙ্ক কুমার আর তার স্ত্রী কৃষ্ণা বতি দুজনে মিলে মনোরথ দ্বিতীয়া ব্রত করতে আরম্ভ করল এবং দেহ ত্যাগের পর তাদের অক্ষয় স্বর্গ লাভ হল।

মনোরথ দ্বিতীয়া ব্রতের ফল

আষাঢ় মাসে শুক্লা পক্ষে দ্বিতীয়া তিথিতে মনোরথ দ্বিতীয়া ব্রত পালন করলে জীবের সমস্ত মনো বাসনা পূর্ণ হয় এবং দেহত্যাগের পর গুলোকে বিষ্ণুর কাছে তার স্থান হয়।

আদর সিংহাসন ব্রত

আষাঢ়  মাসের আরও অন্যান্য ব্রতকথা পড়ুন ও ব্রতের নিয়ম জানুন। 

ভারত শাস্ত্র এর সমস্ত আপডেট এখন টেলিগ্রামে। এখনি যুক্ত হন আমাদের টেলিগ্রাম চ্য়ানেলে। (Join Telegram)

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top
Durga puja 2023 full panchang Top 5 Chants of Maa Durga Top 5 Ganesh Mantra for Ganesh Chaturthi Radha Krishna: দেখুন শ্রী রাধা কৃষ্ণের অপূর্ব রূপ Radha Krishna Leela Happy Holi