বিবস্বৎসপ্তমী ব্রত সময় বা কাল
আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষের সপ্তমী তিথিতে সূর্যের পুজো আর অর্ঘ্য দিয়ে বিবস্বৎসপ্তমী ব্রত আরম্ভ করা হয় । এই ব্রত সধবাদের করণীয়।
বিবস্বৎসপ্তমী ব্রতের দ্রব্য ও বিধান
জবা কিংবা অন্য কোন লাল ফুল, দূর্বা এবং লাল চন্দন আতপ, চাল, ফল ও মিষ্টান্ন । বিবস্বৎসপ্তমী ব্রত পালন করতে হলে প্রতি দিন সকালে স্নান করে খোলা বা এলো চুলে সিঁথিতে সিঁদুর দিয়ে ও কপালে সিঁদুরের টিপ ও আলতা পরে তিন বার হাত জোড় করে সূর্যকে অর্ঘ্য দিয়ে প্রণাম মন্ত্র পড়ে প্রণাম করতে হবে।
বিবস্বৎসপ্তমী ব্রতকথা
এক দেশে একজন খুব গরিব ব্রাহ্মণ ও তার স্ত্রী ছিল। ব্রাহ্মণ সারাদিন ভিক্ষে করে যা পেত তাই নিয়ে সন্ধ্যেবেলা বাড়ি ফিরত। তারা তাই রান্না করে রাত্তিরে খেতে এবং সকালের জন্য কিছু পান্তা ভাত রেখে দিত।
পান্তা খেয়ে সকালে ব্রাহ্মণ আবার ভিক্ষায় বেরত। ব্রাহ্মণী সব সময় চোখের জল ফেলতো আর ভগবানকে ডেকে ডেকে বলত, “ভগবান! আমাদের দুঃখ কি আর বুঝবে না?”
পবন কুমার নামে সেই দেশের রাজা একটি ছেলে ছিল তার নাম পবন কুমার। সে কুষ্ঠ রোগে ভুগছিল। এই কারণে রাজার মনে কোন শান্তি ছিল না। নানান দেশের নানান রকম চিকিৎসকের বিয়ের রাজা ছেলে চিকিৎসা করালেন,
কিন্তু কেউ কবর কুমারকে সারিয়ে দিতে পারল না। পবন কুমারের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল মন্ত্রীর মেয়ে কনক মালার। স্বামীর এই রোগ কেউ সারাতে পারল না দেখে কনক মালা সব সময় খুব কান্নাকাটি করত।
রাজপুরীর ভেতরে একটা বাগানে সূর্য মন্দির ছিল, কনক মালা রোজই সেখানে গিয়ে পুজো দিত। একদিন সকালে উপোস করে স্নান করার পর সে সূর্য মন্দিরে গিয়ে ধর্না দিয়ে খুব কাতর ভাবে সূর্যদেবকে ডাকতে লাগলো।
কিছুক্ষণ পরে কনক মালা সেই মন্দিরের মধ্যে ঘুমিয়ে পড়ল। ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে সে একটা বিচিত্র স্বপ্ন দেখল যে, লাল কাপড় পরা একজন জ্যোতির্ময় পুরুষ তার সামনে এসে বলছে, “আমি স্বয়ং সূর্য দেব!
তুই আমাকে খুব কাতর করে ডাকছিস বলে আমি তোর সামনে এলাম। তোর মনে কি আছে আমি জানি। আমি যা বলি মন দিয়ে সেই মত কাজ করিস, তাহলেই তোর স্বামীর রোগ সেরে যাবে। কয়েক জন্ম আগে তোর স্বামী এক ব্রাহ্মণের চাকর ছিল, কিন্তু সে ছিল খুব রাগী।
এক দিন সামান্য কথা কাটা কাটির পর সে ব্রাহ্মণকে একটা লাথি মেরেছিল। সেই ব্রাহ্মণ আমাকে খুব ভক্তি করত। সে আমার কাছে প্রার্থনা জানিয়ে বলল,”সূর্যদেব, একে সাত জন্মের কুষ্ঠ রোগ দাও।
তারপর থেকে সজন্ম পর পর তোর স্বামী কুষ্ঠ রোগে ভুগছে। তুই আমার কথা মতো কাজ কর তাহলেই তোর স্বামীর রোগ সেরে যাবে।”
কনক মালা বলল,”বলুন প্রভু, আমাকে কি করতে হবে? “সূর্যদেব তখন বললে,”রাজ পুরীর রাজ দক্ষিণ দিকে প্রায় চার কোষ দূরে একটা ভাঙ্গা কুঁড়ে ঘরে খুব গরীব এক ব্রাহ্মণ আর ব্রাহ্মণী বাস করে।
সেই ব্রাহ্মণকে দিয়ে আমার পুজো ও অর্ঘ্য দান করিয়ে তোকে তাদের চরণামৃত খেতে হবে এবং তাদের অনেক ধন দৌলত দিতে হবে।”এই সময় কনক মালার ঘুম ভেঙে গেল, তখন প্রায় সন্ধ্যে হয়ে এসেছে।
কনক মালা তাড়াতাড়ি রাজপুরীতে ফিরে এসে সব কথা রাজাও রানীকে জানালো। এরপরই কাল বিলম্ব না করে ব্রাহ্মণ ও ব্রাহ্মণীকে রাজ বাড়িতে আনানো হলো।
পবন কুমার ও কনক মালা, সেই ব্রাহ্মণ ও ব্রাহ্মণীর পা ধোয়া জল পান করে তাদের কাছে ক্ষমা চাইলো। ব্রাহ্মণ ও ব্রাহ্মণী প্রথমে কিছুই বুঝতে পারেনি, পরে সূর্যদেবের দয়ায় তারা সবই জানতে পারল।
সূর্য দেবের দয়াতে পবন কুমারের কুষ্ট ব্যাধি সম্পূর্ণ সেরে গেল। রাজা ব্রাহ্মণ ও ব্রাহ্মণীকে অনেক ধন দৌলত দিলেন। পবন কুমারের রোগ সারার জন্য রাজার আদেশে রাজ্যের রাজধানীতে লেগে গেল আনন্দ উৎসব।
তারপর একদিন আষাঢ় মাসে শুক্লা সপ্তমী তিথিতে খুব জাক জমকের সঙ্গে সূর্য মন্দিরে পবন কুমার ও কনক মালা সেই ব্রাহ্মণকে নিয়ে বিবস্বৎ সপ্তমির ব্রত করলো।
বিবস্বৎসপ্তমী ব্রতের ফল
এই ব্রত যে পালন করে সে রোগ, শোক আর বিপদের হাত থেকে নিস্তার পায়, মা লক্ষ্মী তার বাড়িতে অচলা হয়ে অবস্থান করেন।
আষাঢ় মাসের আরও অন্যান্য ব্রতকথা পড়ুন ও ব্রতের নিয়ম জানুন।
ভারত শাস্ত্র এর সমস্ত আপডেট এখন টেলিগ্রামে। এখনি যুক্ত হন আমাদের টেলিগ্রাম চ্য়ানেলে। (Join Telegram)
Share with others:
- Click to share on X (Opens in new window) X
- Click to share on Facebook (Opens in new window) Facebook
- Click to share on Pinterest (Opens in new window) Pinterest
- Click to share on Telegram (Opens in new window) Telegram
- Click to share on WhatsApp (Opens in new window) WhatsApp
- Click to email a link to a friend (Opens in new window) Email
- More