পৃথিবী ব্রতের সময় বা কাল
চৈত্র সংক্রান্তি থেকে সারা বৈশাখ মাস এই ব্রত পালন করার নিয়ম। কুমারী মেয়েরাই এই ব্রত নেওয়া ও পালনের অধিকারী।
পৃথিবী ব্রতের দ্রব্য ও বিধান
আতপ চালের পিটুলি গোলা, ছোট শাঁক, মধু ,দুধ ও গাওয়া ঘি দিয়ে পৃথিবী পুজো করতে হয়। মাটি র উপর পরিষ্কার করে, পিটুলি দিয়ে একটা পদ্ম পাতা আঁকতে হবে।
তারপর পৃথিবীও ধরিত্রী দেবীকে আঁকতে হবে। পুজোর সময় শাখের মধ্যে ঘি, দুধ ও মধু ঢেলে দিয়ে সেই আঁকা আলপনার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে তিনবার পৃথিবী পূজার মন্ত্র পাঠ করার নিয়ম।
শেষে ওই শাখের মধ্যে ঢালা জিনিসগুলো আঁকা আলপনার উপর ঢেলে দিতে হবে। এইভাবে চার বছর এই পৃথিবী ব্রত করে উদযাপন করা কর্তব্য আর উদযাপনের সময় একটি সোনার পদ্মপাতা গড়িয়ে দান করা বিধি।
পৃথিবী ব্রতকথা
এই পৃথিবী আমাদের মা। আমরা এই পৃথিবীর প্রতি অনেক রকমের অত্যাচার করি কিন্তু পৃথিবী সমস্ত ই সহ্য করেন, এই সর্বংসহা মাকে আমাদের সন্তুষ্ট রাখা দরকার আর সেই জন্যই পৃথিবী পুজোর ব্রত প্রচলিত হয়েছে পৃথিবীর ব্রত।
এই পৃথিবীর ব্রত পালন করলে সংসারের সব রকমের অমঙ্গল দূর হয়ে, মঙ্গল হয়ে থাকে। সীমান্তের পশ্চিম প্রান্তে সুবীর নামে এক রাজার রাজত্ব ছিল। এই রাজার দুই রানী সুনন্দা ও রত্না।
সুনন্দার গর্ভে রাজার দুটি মেয়ে হয়, তাদের নাম মন্দা আর স্নিগ্ধা। ছোট রানী রত্নার একটি মেয়ে হয়েছিল তার নাম ছিল বীর বালা। রাজা, সুনন্দা আর মন্দা ও স্নিগ্ধাগে খুবই ভাল বাসতেন, কিন্তু রত্নার এইজন্যে মনে কোন শান্তিই ছিল না।
কি করে সুনন্দা আর তার মেয়ে দুটির অনিষ্ট করা যায় , এই চিন্তাতেই ছোট রানী রত্না অস্থির হয়ে থাকতো সব সময়। সে তার মেয়ে বীরবালা কে দিয়ে, ওদের সব কাজ সবসময়ই পন্ড করে দেওয়ার চেষ্টা করত।
মন্দা আর স্নিগ্ধা কিন্তু পৃথিবীর ব্রত নিয়ে রেখেছিল আর খুব ভক্তির সঙ্গে ব্রত পালন করতো। প্রথম বছর কেটে যাওয়ার পর তারা যখন দ্বিতীয় বছরের পুজোর আয়োজন করে তাদের উঠোনে বসে পুজোর মন্ত্র পড়ছে
সেই সময় ছোট রানীর মেয়ে বীর বালা ছুটে এসে তাদের বলল, তোমরা শিগগির বাড়ির ভেতরে এসো বড় মা যেন কেমন একরকম হয়ে হা হুতাস করছে।
মন্দা আর স্নিগ্ধা তাদের পুজোর শেষ না করেই তাদের মা কাছে ছুটে গেল। সেখানে গিয়ে তারা তাদের মার কাছে শুনল যে ছোট রানী রত্না তাদের মা ও মেয়েদের নামে অনেক মিথ্যে কথা বলেছে।
রাজার হুকুম তাদের সেই দ্বন্দ্বেই বনবাসে যেতে হবে। মার মুখে সব কথা শুনে মেয়েরাও খুব মর্মাহত হল। কিন্তু এখন আর কোন উপায় নেই বনবাসে তাদের যেতেই হবে।
এরপর তারা বনবাসে যাওয়ার জন্য বেরিয়ে পড়ল এবং শেষে এক নিবিড় অন্ধকারে বনে গিয়ে পৌঁছল। ভাগ্যক্রমে সেই বনে তারা একটি খালি কুটির দেখতে পেল।
আর কোথাও কিছু দেখতে না পেয়ে তারা সেই কুটিরের ভেতরে বাস করবার ব্যবস্থা করল। এইভাবে কয়েকটা দিন কেটে যাওয়ার পর একদিন মন্দা ও স্নিগ্ধা কুটির থেকে কিছু দূরে একটি পুকুরের পাড়ে বসে পৃথিবীর পুজো ও ব্রত শেষ করে কুটিরে ফিরে এসে দেখলো যে তাদের মা কুটিরে নেই।
তারা অনেক কান্নাকাটি করে খোঁজাখুঁজি করল। কিন্তু কোথাও মার সন্ধান পেল না। তারা একথাও জানতে পারল না যে এক দস্যু তাদের মাকে চুরি করে নিয়ে গেছে।
তারা কেবল হাঁ হু তাস করে তাদের দুঃখের কথা মার ধরিত্রীকেই জানাতে লাগলো। এমন সময় বনের মধ্যে থেকেই কে যেন বলে উঠলো, তোদের ভয় নেই আর কিছু সময় অপেক্ষা কর।
মন্দা আর স্নিগ্ধা এই কথায় আশ্বস্ত হল আর তাদের ব্রত অনুষ্ঠান চালিয়ে যেতে লাগলো। এদিকে রাজা সুবীরের মনেও কোন শান্তি ছিল না।
এছাড়া ছোট রানী রত্নার পরামর্শ মত রাজ্য পাঠ চালানোর ফলে প্রজারা বিদ্রোহ করল। এবং রাজ পরিবারকে পুড়িয়ে মারবার সংকল্প করল।
ছোট রানী রত্না আর তার মেয়ে বীরবালা কে তারা পুড়িয়ে মেরে ফেলে রাজা সুবীরকে একটা গাছের সঙ্গে বেঁধে আগুনে দেওয়ার যোগাড় করছে এমন সময় এক সাধু বড়রানী সুনন্দাকে নিয়ে সেখানে উপস্থিত
হলেন বললেন মূর্খ রাজা বুদ্ধির দোষে তুমি তোমার সর্বনাশ দেখে এনেছ কিন্তু আর ভয় নেই তোমার কোন লক্ষী বড় নানি সুনন্দাকে আমি নিয়ে এসেছি।
প্রজারা ও বড় রানী সুনন্দাকে দেখে আনন্দে অধীর হয়ে উঠল। চিৎকার করে প্রজারা বলতে লাগলো আর আমাদের ভয় নেই।
এইবার আমরা শান্তিতে বাস করতে পারবো। এই বলে তারা মহারাজের বাঁধন খুলে দিয়ে মহারাজকে রাজপুরীতে নিয়ে গেল।
অবশেষে রাজার জীবন রক্ষা হল আর রাজ্যে ও শান্তি ফিরে এলো। রাজা শেষে মন্দা ও স্নিগ্ধাকে এনে দেওয়ার জন্য সেই সাধুকে অনুরোধ করলো।
সাধু তখন রাজা কে বলল যে তার তার দুটি মেয়ের পৃথিবীর ব্রত পালন করার ফলেই রাজা আজ তার সব ফিরে পেয়েছে আর তার মেয়েরাও শীঘ্রই ফিরে আসবে। এই কথা বলে সেই সাধু অদৃশ্য হয়ে গেলেন
অল্প দিনেই মধ্যেই মন্দা ও স্নিগ্ধা রাজ্যে ফিরে এলো। রাজ্যে তখন চলল আনন্দ উৎসব। মন্দা ও স্নিগ্ধা রাজপুরীর উঠোনে ভালো করে আলপনা দিয়ে আবার পৃথিবীব্রত পালন আরম্ভ করল।
পৃথিবী ব্রতের পুজোর মন্ত্র
এসো মা পৃথিবীর বস মা পদ্মপাতে শঙ্খ চক্র গদা পদ্ম ধরি দুই হাতে।
খাওয়াবো ক্ষীর আর মাখন ননী আমি যেন হই মাগো বড় রাজার রানী।
পৃথিবী পূজার শেষে পৃথিবী কে প্রণাম করবেন। প্রণাম মন্ত্র ও প্রার্থনা মন্ত্র ও পৃথিবীর স্তোত্রম নিচে দেওয়া হল।
পৃথিবীর প্রণাম মন্ত্র
পৃথিবী স্তোত্রম
ভারতশাস্ত্র এর সমস্ত আপডেট এখন টেলিগ্রামে। এখনি আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেল জয়েন করুন।