ভাদ্র মাসের শুক্লপক্ষে পালিত একাদশী তিথিকে পরিবর্তিনী একাদশী (Parivartini Ekadashi) বা পার্শ্ব একাদশী (Parshwa Ekadashi) বলা হয়। এদিন ভগবান শ্রীহরি জগন্নাথ দেব পার্শ্ব পরিবর্তন করেন। তাই একে পার্শ্ব পরিবর্তনের একাদশীও বলা হয়। (Parivartini Ekadashi mahatmya)
এই একাদশীকে ব্রহ্মহ্মবৈবর্ত পুরাণে স্বর্গপ্রদ, মোক্ষদায়িনী ও সর্বপাপহারিণী মহাপুণ্যবতী তিথি হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। ভক্তি সহকারে বামনদেব ও শ্রীবিষ্ণুর পূজা করলে ভক্ত ত্রিভুবনে পূজ্য হন এবং অন্তিমে বিষ্ণুলোকে গতি লাভ করেন।
যুধিষ্ঠির ও শ্রীকৃষ্ণের সংলাপ
মহারাজ যুধিষ্ঠির একবার ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন—
“হে অচ্যুত! আপনি চারিমাস শায়িত থাকেন কিভাবে? পার্শ্ব পরিবর্তন করেন কেমন করে? আপনার শয়নকালে ভক্তদের করণীয় কী? আর দানবরাজ বলিকে কেন বন্দী করেছিলেন?”
তখন শ্রীকৃষ্ণ বামন অবতারের বিস্ময়কর কাহিনি বর্ণনা করেন।
বামন অবতারের কাহিনি ও বলির মহাদান
প্রহ্লাদের পৌত্র রাজা বলি ছিলেন ভগবানের অনন্য ভক্ত। তিনি দেব-দেবীদের পূজা, যজ্ঞ ও দানধর্মে ছিলেন অগ্রগণ্য। কিন্তু দেবতাদের পরাজিত করার কারণে ইন্দ্র ভগবানের শরণাপন্ন হন।
ভগবান কশ্যপ ও অদিতির গৃহে বামন রূপে আবির্ভূত হয়ে বলির যজ্ঞসভায় উপস্থিত হলেন। তিনি তিন পা ভূমি ভিক্ষা চান। গুরু শুক্রাচার্যের নিষেধ সত্ত্বেও সত্যাশ্রয় বলি ভগবানকে তিন পা ভূমি দান করতে সংকল্প করেন।
তখন বামনদেব বিশাল রূপ ধারণ করে—
- এক পা ঊর্ধ্বলোকে
- এক পা পাতালে
- আর তৃতীয় পদ স্থাপনের জন্য বলির মস্তক গ্রহণ করেন।
ভগবান চরণ রাখেন বলির শিরে এবং ঘোষণা করেন, তিনি সর্বদা বলির নিকটে বিরাজ করবেন।
পরিবর্তিনী একাদশীর মাহাত্ম্য
ভাদ্র মাসের শুক্লপক্ষের একাদশী তিথিতে বামনদেবের পূজা ও শ্রীহরির পার্শ্ব পরিবর্তনের মাধ্যমে এই ব্রতের মাহাত্ম্য বৃদ্ধি পায়। এই তিথি পালনে—
- সহস্র অশ্বমেধ যজ্ঞের সমান ফল লাভ হয়।
- সকল পাপ নাশ হয়ে ভক্ত মোক্ষ লাভ করেন।
- এই ব্রতের কাহিনি পাঠ বা শ্রবণে বাজপেয় যজ্ঞের ফল প্রাপ্ত হয়।
পরিবর্তিনী একাদশী ব্রত পালনের ফল
চারিমাস শয়নকালীন সময়ে ভক্ত যদি একাদশী ব্রত পালন না করেন, তবে জীবিত থেকেও তাকে মৃতের সমান ধরা হয়।
অন্যদিকে, পরিবর্তিনী একাদশীর ব্রত পালন করলে ভক্ত—
- দেবলোকে গৌরব অর্জন করেন
- পরম মঙ্গল লাভ করেন
- ভগবান বিষ্ণুর চরণে স্থান পান
উপসংহার
ভাদ্র মাসের পরিবর্তিনী বা পার্শ্ব একাদশী শুধু একটি ব্রত নয়, এটি ভক্তের জীবনে শুভফল, পাপক্ষয় ও ভগবানের কৃপালাভের মহাদ্বার। এই পবিত্র দিনে ভগবান শ্রীবামন ও শ্রীজগন্নাথের পূজা-অর্চনা করলে ভক্ত জীবনে সত্যিকারের শান্তি ও মুক্তির পথ খুঁজে পান।
FAQ Section (Schema for SEO)
1. পার্শ্ব বা পরিবর্তিনী একাদশী কবে পালিত হয়?
ভাদ্র মাসের শুক্লপক্ষের একাদশী তিথিতে পরিবর্তিনী বা পার্শ্ব একাদশী পালিত হয়। এই তিথিতে শ্রীহরি পার্শ্ব পরিবর্তন করেন।
2. পার্শ্ব বা পরিবর্তিনী একাদশীর মাহাত্ম্য কী?
এই একাদশী পালনে সহস্র অশ্বমেধ যজ্ঞের সমান ফল লাভ হয়। এটি সর্বপাপহরা, মোক্ষদায়িনী ও মহাপুণ্যবতী তিথি।
3. পার্শ্ব বা পরিবর্তিনী একাদশীতে কোন দেবতার পূজা করা হয়?
এই দিনে ভগবান শ্রীবামন দেব ও শ্রীবিষ্ণুর পূজা করা হয়। ভক্তরা পদ্মপুষ্প দিয়ে ভগবানকে অর্চনা করেন।
4. পার্শ্ব বা পরিবর্তিনী একাদশীর সাথে বামন অবতারের সম্পর্ক কী?
ভগবান শ্রীবিষ্ণু বামন অবতারে রাজা বলির কাছ থেকে তিন পা ভূমি ভিক্ষা নেন। এই কাহিনি পরিবর্তিনী একাদশীর মাহাত্ম্য বর্ণনায় গুরুত্বপূর্ণ।
5. পার্শ্ব বা পরিবর্তিনী একাদশীর ব্রত পালন করলে কী ফল মেলে?
এই ব্রত পালনে ভক্তের সকল পাপ নাশ হয়, পরম মঙ্গল লাভ হয় এবং ভগবান বিষ্ণুর চরণে স্থান লাভ হয়।