জন্মাষ্টমী ব্রত : Janmashtami Broto
জন্মাষ্টমী ব্রত সময় বা কাল– ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে এই ব্রত পালন করতে হয়। স্ত্রী ও পুরুষ সকলেই এই ব্রত পালন করতে পারে।
জন্মাষ্টমী ব্রতের দ্রব্য ও বিধান—তিল, ফুল, তুলসী, দূর্বা, ধূপ, দীপ, পঞ্চগব্য, পঞ্চগুঁড়ি, আতপচালের নৈবেদ্য, ফলের নৈবেদ্য, পাট, বালি, মধুপর্কের বাড়ি, আসন, অঙ্গুরী, পূর্ণপাত্র, দই, মধু, চিনি, তেল ও হলুদ।
জন্মাষ্টমী ব্রতের আগের দিন নিরামিষ খেয়ে সংযম করে থাকতে হবে আর ব্রতের দিন উপোস করতে হবে। কুলপুরোহিতকে দিয়ে পুজো করিয়ে দক্ষিণা দিয়ে ব্রাহ্মণ ভোজন করিয়ে প্রসাদ গ্রহণ করবে।
জন্মাষ্টমী ব্রতকথা— মথুরায় উগ্রসেন নামে এক অতি ধার্মিক রাজা ছিলেন। তাঁর ছেলে কংস এক সময় খুব অত্যাচারী হয়ে উঠল। সে তার বাবার রাজসিংহাসন জোর করে কেড়ে নিল।
তারপর সে মহাদেবকে আরাধনায় সন্তুষ্ট করে বর পেল যে, শুধুমাত্র নিজের বোনের অষ্টম গর্ভের সন্তানের হাতেই সে মরবে, অন্য আর কারুর হাতে তার মৃত্যু নেই। এই বর পাবার পর তার সাহস আর অত্যাচার অনেক গুণ বেড়ে গেল।
শেষে অন্য সব অসুরদের সঙ্গে যোগ দিয়ে সে প্রচার করে দিল যে, রাজ্যে কেউ হরিনাম করতে পারবে না যে হরিনাম করবে তার আর রক্ষে নেই।
তারপর সে তার বোন দেবকী আর তার স্বামী বসুদেবকে এনে কারাগারে বন্দী করে রাখল, কারণ সে জানত যে, তার বোন দেবকীর অষ্টম গর্ভের সন্তানের হাতেই তার মৃত্যু হবে।
এইভাবে কারাগারে থাকতে থাকতে দেবকীর সাতটি ছেলে হল আর কংস প্রত্যেকটিকে কারাগার থেকে নিয়ে গিয়ে পাথরের ওপর আছাড় মেরে তাদের ফেরে ফেলল।
শেষে যখন কংস খবর গেল এইবার দেবকীর অষ্টম গর্ভের সন্তান হবে তখন সে কারাগারের চারিদিকে খুব কড়া পাহারার ব্যবস্থা করল।
এরই মধ্যে ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে গভীর রাত্তিরে নারায়ণ ভূমিষ্ঠ হলেন দেবকীর কোলে। নারায়ণের শ্যামবর্ণ চতুর্ভুজ মূর্তি দেখে দেবকী আর বসুদেব এক্কেবারে মুগ্ধ হয়ে গেলেন। বসুদেব খুবই কাতরভাবে ভগবানকে ডাকতে লাগলেন
এই ছেলেটিকে রক্ষা করবার জন্যে।
Sree krishna janmashtami
এই সময়ে কারাগারে এক দৈববাদী -বসুদেব। আমার মায়ায় এখন সমস্ত পৃথিবীর লোক ঘুমে অচেতন হয়ে আছে- তুমি এই মুহূর্তে গোকুলে নন্দের বাড়িতে গিয়ে লুকিয়ে এই শিশুটিকে রেখে এসো আর নদের স্ত্রী যশোমতীর এইংশে একটি মেয়ে হয়েছে, তাকে নিয়ে এসে দেহরীর কোলে শুইয়ে দাও।
ঘুমে আচ্ছন্ন পৃথিবীর কেউ কিছুই জানতে না।”শোনার পর বসুদের আর দেরি না করে কৃষ্ণকে কোলে করে। নদের বাড়ি যাবার জন্যে বেরিয়ে পড়লেন। প্রহরীরা সকলেই তখন ঘুমে অচেন, কেউ কিছুই জানতে পারল না।
বসুদের গিয়ে পৌঁছালেন যমুনার তীরে। এই সময়ে হল, যমুনার | দুকূল ছাপিয়ে উঠেছিল আর ভয়ানক বিদ্যুৎ ছিল। এই দুর্যোগ দেখে বসুদেবের মনে ভীষণ ভয় হল। এই অবস্থায় যমুনা পার হওয়া অসম্ভব দেখে তিনি খুবই চিন্তিত হয়ে পড়লেন।
কিন্তু নারায়ণ তার মায়া ছড়িয়ে দিয়েছিলেন চারিদিকে। এই সময়ে বসুদেবের চোখে পড়ল যে, যমুনার জল হঠাৎ কমে গিয়ে হাঁটু সমান হয়ে গেছে আর একটা শিয়াল অনায়াসে যমুনা পার হয়ে যাচ্ছে।
বসুদেবও তখনই চললেন শিয়লাটার পিছনে পিছনে। বসুদের ও তার সন্তানকে ভীষণ বৃষ্টি থেকে বাঁচাবার জন্যে নাগরাজ তার বিশাল ফলা বিস্তার করে ধরলেন তাদের মাথার ওপরে।
এইভাবে অল্প সময়ের মধ্যে বসুদের কৃষ্ণকে যশোমতীর কোলের কাছে রেখে মেয়েটিকে নিয়ে আবার কারাগারে ফিরে এলেন ও মেয়েটিকে অর্থাৎ দেবী যোগমায়াকে দেবকীর কোলে রেখে দিলেন।
সকাল হতেই কংস খবর পেল যে দেবকীর অষ্টম গর্ভের সন্তান একটি মেয়ে হয়েছে। কংস তখনি দেবকীর কোল থেকে জোর করে মেয়েটিকে কেড়ে নিল।
মেয়ে বলে তাকে ছেড়ে দেবার জন্যে দেবকী অনেক অনুনয় বিনয় করল; কিন্তু কংস কোনো কথাই শুনন না। সে যেমনি মেয়েটিকে পাথরের ওপর আছাড় মারতে গেল সেই মুহূর্তেই তার হাত থেকে মেয়েটি শূন্যে উঠে গিয়ে যোগমায়া মূর্তি ধারণ করে শূন্যে মিলিয়ে গেলেন। যাবার সময় তিনি কংসকে বলেন গেলেন, “তোমারে বধিবে যে—গোকুলে বাড়িছে সে।
তারণর সময় পূর্ণ হতে কংস শ্রীকৃষ্ণের হাতেই বধ হয়েছিল। এই পুণ্যময় ব্রতকথা, যে ভাদ্র মাসের কৃষ্ণা মীর দিন উপোস করে থেকে মন দিয়ে শোনে, তার সাতজন্মের পাপ নাশ হয়, অন্তিমকালে তার বৈকুণ্ঠ লাভ হয়ে থাকে।
জন্মাষ্টমী ব্রতের ফল— জন্মাষ্টমী ব্রত, স্ত্রী ও পুরুষ উভয়েই পালনের অধিকারী। এই দিন শ্রীকৃষ্ণ জন্মগ্রহণ করেছিলেন বলে দিনটি খুবই শুভ। এই ব্রত পালন করলে সমস্ত পাপ ও অকল্যাণ দূর হয়।
ভারতশাস্ত্র এর সমস্ত আপডেট এখন টেলিগ্রামে পেয়ে যাবেন (Join Telegram)