শঙ্খনিধি সদাগরের কাহিনী | শনিদেবের মাহাত্ম্য Shanidev Vratkatha
ভূমিকা
হিন্দু ধর্মে শনিদেব এক বিশেষ স্থান অধিকার করে আছেন। অনেকেই তাঁকে ভয় করেন, কেউবা পূজো করে শান্তি চান। তবে শনিদেব শুধু শাস্তিদাতা নন, তিনি পরিক্ষা করেন এবং প্রভু ভক্তের ভুল শুধরাতে সুযোগও দেন।
আজ আমরা এমনই এক কাহিনী বলব (Shanidev Vratkatha) — শঙ্খনিধি সদাগরের জীবন থেকে নেওয়া একটি শিক্ষা, যিনি শনির অনুগ্রহে ধনী হন এবং পুনরায় তার অবহেলায় পতিত হন।
শঙ্খনিধির পরিচয়
শঙ্খনিধি ছিলেন বিজয়নগরের এক বণিকনন্দন। তিনি সর্বদা বাণিজ্যে মনোযোগী থাকতেন কিন্তু কোনো ফল পেতেন না। তাঁর মন সদা অশান্ত থাকত। (Shanidev Vratkatha)
একদিন তিনি শত ডিঙ্গা নিয়ে গঙ্গা দিয়ে অন্য শহরে বাণিজ্যে যাচ্ছিলেন। পথে একটি স্থানে দেখলেন, এক ব্রাহ্মণপুত্র সপরিবারে শনিদেবের পূজায় ব্যস্ত। শঙ্খনিধি কৌতূহলী হয়ে জানতে চাইলেন, এই পূজা কিসের?
শনি পূজার সূচনা
ব্রাহ্মণ জানালেন, এই পূজা শনিদেবের। যিনি পূজা করেন, তাঁর সমস্ত কর্ম সিদ্ধ হয় — এমন বলা আছে বেদে। শঙ্খনিধি শ্রদ্ধাভরে বললেন, “যদি শুভ হয়, আমিও পূজো করব।” ব্রাহ্মণ পূজার নিয়ম লিখে দিলেন, এবং শঙ্খনিধি পূজা শুরু করলেন।
শনির কৃপা ও অশেষ ধন
শঙ্খনিধি দেশ থেকে দেশে গিয়ে বাণিজ্য করতে লাগলেন। অল্পদিনেই বিপুল লাভ হলো। ধনে ধনে তিনি সমৃদ্ধ হলেন। এমনকি ইন্দ্রদেবের ধনের তুলনায় তাঁর ধন বেশী হয়ে গেল। (Shanidev Vratkatha)
তিনি শনির পূজায় অবিচল ছিলেন। নির্জন স্থানে বসে নিত্য পূজা করতেন। তাঁর ধন শতগুণে বাড়তে লাগল। তিনি সুখে থাকতেন, কিন্তু কখনও শনির পূজাতে অবহেলা করতেন না — এই সময় পর্যন্ত।
অহংকার ও পতনের শুরু
ধনে মাতাল হয়ে গেলেন শঙ্খনিধি। শনির পূজা ভুলে গেলেন। ঠিক তখনই শুরু হলো বিপদ। একদিন ডাকাতরা এক রাজ্য থেকে প্রচুর ধন চুরি করে অল্প দামে শঙ্খনিধির কাছে বিক্রি করে দেয়।
এটা ছিল শনির চাল। শঙ্খনিধিকে গ্রেফতার করা হয়। রাজা তাঁকে চিরদিনের জন্য কারাগারে পাঠান। (Shanidev Vratkatha)
কারাগারে শঙ্খনিধির প্রার্থনা
শঙ্খনিধি কারাগারে কান্নায় ভেঙে পড়েন। ভগবান শনিদেবের কাছে কাকুতি-মিনতি করে প্রার্থনা করেন। তাঁর হৃদয় ভরা অনুশোচনায় ভগবানকে ডেকে বলেন:
“আমি অহংকারে ভরে গিয়েছিলাম, তোমার পূজায় অবহেলা করেছিলাম। আজ বুঝেছি, তুমি ছাড়া কেউ বন্ধু নও। তুমি আমায় রক্ষা করো।”
শনির স্বপ্নাদেশ
রাজা সেই রাতে স্বপ্নে শনিদেবকে দেখলেন। শনি বললেন, “শঙ্খনিধিকে ছেড়ে দাও, নয়তো তোমার রাজ্যে বিপদ আসবে।” রাজা ভোরে কারাগারে গিয়ে শঙ্খনিধিকে মুক্ত করেন।
রাজা বলেন, “তোমার কোনো দোষ নেই, এ কষ্ট দৈব। এখন তুমি স্বদেশে ফিরে যাও।”
স্বদেশে প্রত্যাবর্তন ও পুনরায় শনি পূজা
শঙ্খনিধি শত তরী নিয়ে নিজের দেশে ফিরে এলেন। সবার আগে শনিদেবের পূজা করলেন। আবার ধীরে ধীরে তাঁর পরিবার ও সমাজজীবন ফিরে পেলেন।
তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন, জীবনে যতই ধন আসুক, তিনি কখনও শনির পূজা ত্যাগ করবেন না।
নিত্য শনি পূজা ও আনন্দময় জীবন
শঙ্খনিধি প্রতি শনিবারে শনি পূজা করতেন। ব্রাহ্মণ ও দরিদ্রদের দান করতেন। তাঁর ঘর আনন্দে ভরে উঠল। স্বজন, কুটুম্ব সকলেই মহোৎসবে শামিল হতেন।

You can have short product description here. It can be added as and enable/disable toggle option from which user can have control on it.
পাঠকদের উদ্দেশ্যে উপদেশ
এই কাহিনী থেকে আমরা শিক্ষা পাই:
- শনিদেবের পূজায় রয়েছে অতুল শক্তি
- অহংকার পতনের মূল
- শনি রুষ্ট হলে কারও সাধ্য নেই রক্ষা করতে
- শনি তুষ্ট হলে অসীম সুখ লাভ সম্ভব
তাই, সকলকে বলি— প্রতি শনিবারে ভক্তিভরে শনি পূজা করুন। শনির মাহাত্ম্যগান পড়ুন। শনিদেবের প্রতি শ্রদ্ধা রাখলে সমস্ত কষ্ট দূর হবে।
উপসংহার
শঙ্খনিধি সদাগরের কাহিনী কেবল এক পুরাণকথা নয় — এটি এক শিক্ষা, এক চেতনা। শনি আমাদের কর্মফল দেন — তবে ভক্তিকে মূল্য দেন আরও বেশি। এই কারণে শনি পূজায় থাকুক আমাদের একাগ্রতা, বিনয়, আর নিষ্ঠা।
আরও পড়ুন: শনিস্তোত্র – শনির প্রার্থনা পাঠ
গ্রহ দোষ কাটানোর জন্য, এই শনি যন্ত্র টি নিজের ঘরে রাখুন। Buy Now
এই ব্লগটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে, তাহলে অবশ্যই শেয়ার করুন এবং নিচে কমেন্টে আপনার মতামত জানাতে ভুলবেন না।
ভক্তিভরে পাঠ করুন, শ্রদ্ধাভরে শেয়ার করুন — bharatsastra.com