শ্রী শ্রী চণ্ডী অধ্যায় ৩ সারাংশ | Chandi chapter 3 saramsha in Bengali
তৃতীয় অধ্যায় (মহিষাসুরবধ)
দলে দলে নিজেদের সৈন্যদের মরতে দেখে চিক্ষুর নামে মহিষাসুরের এক সেনাপতি দেবীর সঙ্গে যুদ্ধ করতে এসেই দেবীকে বাণে বাণে একেবারে ছেয়ে ফেলল। কিন্তু দেবী ক্ষণিকের মধ্যে চিক্ষুরের ছোঁড়া সমস্ত বাণ কেটে তার রথ, ঘোড়া, সারথি এমনকি ধনুকটি পর্যন্ত কেটে ফেললেন।
এই অবস্থাতেই চিক্ষুর একটা খাঁড়া আর ঢাল দিয়ে দেবীর দিকে ছুটে গিয়ে খাঁড়া দিয়ে সিংহের মাথায় আর দেবীর বাঁ হাতে আঘাত করল, কিন্তু খাঁড়াটি দেবীর হাতে লেগে ভেঙ্গে গেল। তখন চিক্ষুর আরও রেগে গিয়ে দেবীর দিকে একটি ভয়ঙ্কর শূল ছুঁড়ল। এবার দেবী পাল্টা এমন শূল ছুঁড়ল যে, চিক্ষুরের শূলতো কাটলই উপরন্তু তার ঘায়ে চিক্ষুরও মরল।
সঙ্গে সঙ্গে হাতীতে চড়ে চামর অসুর এল যুদ্ধ করতে। সেও এসেই শক্তি, শূল- সবকিছু দেবীর দিকে ছুঁড়তে আরম্ভ করল। কিন্তু যা ছোঁড়ে তাই দেবী কেটে দেন। এরকম যুদ্ধ চলতে চলতেই সিংহটি লাফিয়ে চামরঅসুরের হাতীর মাথায় উঠে- চামরের সঙ্গে যুদ্ধ আরম্ভ করে দিল এবং শেষ পর্যন্ত সিংহই তাকে মেরে ফেলল।
এসময়েই দেবী, উদগ্র, করাল, উদ্ধত, বাস্কল, তাম্র ও অন্ধক নামে অসুর কটিকে মেরে ফেললেন। তারপর ত্রিশূলের আঘাতে উগ্রাস্য, উগ্রবীর্য ও মহাহনু নামে তিনটি মহাসুরকে মেরে, তরবারির ঘায়ে বিড়ালাসুরের মাথাটা কেটে ফেললেন। সেই সঙ্গে বাণের সাহায্যে মারলেন, দুর্মুখ আর দুর্ধর নামে দুটি অসুরকে।
এইভাবে সব সৈন্য মরতে থাকলে মহিষাসুর মহিষের রূপ ধরে দেবীর নিঃশ্বাস থেকে যে সৈন্যরা জন্মেছিল তাদের দিকে তাড়া করে কতকগুলোকে লেজের ঝাপটায় কতকগুলোকে শিং দিয়ে মেরে ফেলল। এরকম করে নানাভাবে দেবীর সৈন্যদের মেরে সে দেবীর বাহন সিংহটিকে মারতে এগিয়ে গেলে দেবী রেগে গেলেন।
তখন মহিষাসুরও রেগে শিং-এ করে পাহাড় উপড়ে উপড়ে দেবীর দিকে ছুঁড়তে রইল। তখন তার সেই ভয়ঙ্কর গমন আর প্রচণ্ড গর্জনে পৃথিবী কাঁপতে রইল, আকাশের মেয় খণ্ড খণ্ড হয়ে গেল, পাহাড়গুলো ভেঙ্গে ভেঙ্গে পড়তে রইল। এবার দেবী চণ্ডী আরও রেগে গিয়ে তাকে পাশ দিয়ে বেঁধে ফেললেন।
কিন্তু মহিষাসুর তখনই মহিষের আকার ছেড়ে সিংহের আকার ধারণ করল। দেবীও সঙ্গে সঙ্গে ঐ সিংহের মাথাটি কেটে ফেললেন। অসুর আবার সঙ্গে সঙ্গে এক পুরুষে পরিণত হয়ে গেল। দেবী বাণ দিয়ে সেই পুরুষকেও কেটে ফেললেন, কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে সে হয়ে গেল একটি বিরাট হাতী।
সে হাতী হয়ে শুড়ে করে সিংহটিকে ধরে টানতে টানতে গর্জন করতে রইল। দেবীও তখনই তার শুঁড়টা কেটে ফেললেন। এবার আবার সে মহিষের রূপ ধরে ভয়ঙ্কর উৎপাত শুরু করে দিল। এতে দেবী আরও রেগে গিয়ে সুরাপান করে অট্টহাসি হাসতে থাকলে মহিষাসুরও গর্জন করে শিং দিয়ে পাহাড় গুলাকে উপড়ে উপড়ে ছুঁড়তে রইল।
দেবী তখন তীর দিয়ে পাহাড়গুলো কাটতে কাটতেই মধুপান করতে রইলেন আর বললেন ওরে মূর্খ, আমি যতক্ষণ মধু খাচ্ছি, ততক্ষণ তুই গর্জন কর; তারপর তোকে আমি মারলেই এখানে দেবতারা গর্জন করবে। এই কথা বলেই দেবী চণ্ডিকা লাফ দিয়ে মহিষাসুরের উপর চড়ে তার গলাটাকে পা দিয়ে পিষে বুকে শূলটা বিধেদিলেন।
তখন দেবীর পায়ে ঐভাবে চাপা পড়েও সে আবার মহিষের মুখ থেকে নিজের আকার ধরে বেরুচ্ছিল কিন্তু আধখানা বের হওয়া মাত্র দেবী তাঁর প্রচণ্ডতেজে তাকে স্তব্ধ করে দিলেন। তখন ঐ আধখানা বেরুনো অবস্থাতেই মহিষাসুর দেবীর সঙ্গে যুদ্ধ করতে থাকলে দেবী তার মাথাটি কেটে ফেললেন।
মেধস্ মুনি মুখ থেকে দেবী দুর্গার নানাভাবে আবির্ভাবের কথা জানুন শ্রী শ্রী দেবীমাহাত্ম্য / চণ্ডীর পরবর্তী অধ্যায় গুলিতে। তাই পড়তে থাকুন জানতে থাকুন ভারত শাস্ত্র।
আগের অধ্যায় পড়ুন – শ্রী শ্রী চণ্ডী দ্বিতীয় অধ্যায় সারাংশ (মহিষাসুরের সৈন্যবধ)
আমাদের এই পোস্ট টি ভাল লাগলে অন্যদেরকে শেয়ার করতে পারেন। নিচের কমেন্ট সেকশনে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন কেমন লাগলো। এছাড়া আপনার মতামত জানতে পারেন।
আমরা সম্পূর্ণ ফ্রী তে হিন্দু ধর্মের মন্ত্র স্তোত্রম ব্রতকথা ইত্যাদি হিন্দু ধর্মের পূজা অর্চনা শেখানোর চেষ্টা করছি। আপনি খুশি হয়ে আমাদের কে কিছু অর্থনৈতিক সাহায্য করলে আমরা আপনার কাছে বাধিত থাকিব। অর্থনৈতিক সাহায্য করতে এখানে ক্লিক করুন।