গীতা সম্বন্ধীয় প্রশ্নোত্তর পর্ব১

গীতা সম্বন্ধীয় প্রশ্নোত্তর | Questions and Answers on Gita

শ্রীমদ ভাগবত গীতা (Shrimad Bhagawat Gita) হল ভগবান শ্রী কৃষ্ণের মুখ নিসৃত বাণী। মহাভারতের (Mahabharat) ভীষ্ম পর্বের (Bhishma Parva) অন্তর্গত ১৮তম অধ্যায়ে গৃহীত।

আমরা এই গীতা সম্বনধিত কিছু  গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্তর (Questions and Answers on Gita) নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্ন উত্তর পর্ব দুটি পর্বে আলোচনা হবে। আজ প্রথম পর্ব (Questions and Answers on Gita)। জনৈক ভদ্রলোক প্রশ্ন করেছেন যে-

প্রশ্ন- গীতা বেদকে স্বীকার করে কি না? যদি স্বীকার করে থাকে তবে তার দৃষ্টিকোন কি? দ্বিতীয় অধ্যায়ের ৪২, ৪৫, ৪৬ এবং ৫৩ শ্লোকসংখ্যায় বেদ সম্বন্ধে নীচু মনোভাবের তাৎপর্য কি?

উত্তর – গীতা বেদ স্বীকার করে এবং বেদ সম্বন্ধে অত্যন্ত উঁচু মনোভাব পোষণ করে। দ্বিতীয় অধ্যায়ের উপর্যুক্ত শ্লোকে বেদের নিন্দা করা হয়নি, কেবলমাত্র ভোগ-ঐশ্বর্য্য কিংবা স্বর্গাদি প্রভৃতি ক্ষণভঙ্গুর এবং বিনাশশীল ফলযুক্ত সকাম কর্মসমূহ থেকে দূরে থেকে আত্মপরায়ণ হবার জন্য বলা হয়েছে।

ভোগসমূহে মানুষের স্বাভাবিকভাবে প্রবৃত্তি হয়ে থাকে। “এই কর্ম করলে প্রচুর অর্থলাভ হবে”, “এই কর্মদ্বারা ইচ্ছামত স্ত্রী- পুত্র লাভ হবে’ কিংবা ‘এই কর্ম করা হলে স্বর্গ প্রভৃতির প্রাপ্তি হবে”- যদি এরূপ মনোমুগ্ধকারী বাক্য শ্রুতিগোচর হয়, তবে মনের আকৃষ্ট হওয়া অনিবার্য হয়ে পড়ে।

ভোগ-লালাসার বৃদ্ধি হয়ে বুদ্ধি চঞ্চল হয়ে পড়ে। বহুশাখাবিশিষ্ট বুদ্ধিদ্বারা আত্মতত্ত্বের উপলব্ধি হয় না এবং তা না হওয়া পর্য্যন্ত দুঃখ-সত্তাপ থেকে চিরকালের জন্য মুক্ত হওয়া যায় না। পরে নবম অধ্যায়ে পুনরায় বলা হয়েছে যে

ত্রৈবিদ্যা মাং সোমপা পুতপাপা যজ্ঞৈরিষ্টা স্বর্গতিং প্রার্থযন্তে। তে পুণ্যমাসাদ্য সুরেন্দ্রলোক মঙ্গন্তি দৈব্যান্ দিবি দেবভোগান। তে তং ভুক্তা স্বর্গলোকং বিশালং ক্ষীণে পুণ্যে মর্ত্য লোকংবিশন্তি। এবং ত্রয়ীধর্ম মনুপ্রপন্না গতাগতং কামকামা নভন্তে। (গীতা ৯/২১-২২)

Questions and Answers on Gita Parva 1

অর্থাৎ – “বেদত্রয়ে বিহিত সকাম কর্মের অনুষ্ঠাতৃগণ, সোমরস-পায়ীগণ, পাপসমূহ থেকে বিমুক্ত হয়ে যারা আমাকে যজ্ঞসমূহ দ্বারা পুজা করে স্বর্গপ্রাপ্তি প্রার্থনা করেন, সে সকল পুরুষগণ স্বীয় পুণ্যের ফলরূপে ইন্দ্রলোক প্রাপ্ত হয়ে স্বর্গে দিব্য দেবতাদিগের ভোগসকল উপভোগ করে থাকে এবং

সেই বিশাল স্বর্গলোক উপভোগ করে পুণ্য ক্ষীণ হলে মৃত্যুলোক প্রাপ্ত হয় এরূপে (স্বর্গের সাধনরূপ) বেদত্রয়ে কথিত (ঋক, যজুঃ, সাম) সকাম কর্মের আশ্রয় গ্রহণকারী ভোগকামনাযুক্ত পুরুষগণ বারংবার গমণা-গমণ করতে থাকেন।”

তাৎপর্য এই যে, সকাম কর্মে যুক্ত ব্যক্তিকে বারংবার সংসার চক্রে আসা-যাওয়া করতে হয়, তাঁরা জন্ম-গ্রহণরূপী কর্মফল-ই লাভ করে। জন্ম-মৃত্যুর চক্র থেকে তাঁরা রেহাই পেতে পারেন না।

বলার তাৎপর্য এই যে, যেহেতু পরম শ্রেয় প্রাপ্তির অন্তরায় কাজেই উহাকে নিষ্কাম কর্ম এবং নিষ্কাম উপাসনা থেকে নিম্ন শ্রেণীর বলা হয়েছে।

এর নিন্দা করা হয়নি, কোথাও এরূপ বলা হয়নি যে, বৈদিক সকামকর্মী পুরুষ “মোহজাল-সমাবৃতাঃ”, “আসুরী সম্পদ যুক্ত পুরুষগণের ন্যায় তারা “পতন্তি নরকেহশুচৌ” অপবিত্র নরকে পতিত হয় কিংবা “আসুরী যোনিমাপন্না মুঢ়া জন্মনি জন্মনি। মামপ্রাপ্যৈযেব কৌন্তেয় ততো ষাণ্ডধমাং গতিম্ ।।” (১৬/২০)

হে কৌন্তেয়! ঐ সকল মৃঢ়পুরুষগণ জন্মে-জন্মান্তর ধরে আসুরী যোনী প্রাপ্ত হয়ে, আমাকে প্রাপ্ত না হয়ে তদপেক্ষাও অতি নিকৃষ্টগতি প্রাপ্ত হয়ে থাকে। পক্ষান্তরে এরূপ বলা হয়েছে যে তাঁরা পাপ থেকে বিমুক্ত হয় (দেব-ঋষি। জনিত পাপ থেকে বিমুক্ত হয়ে।

Shreemad Bhagawat Gita Hard Cover Book
Shreemad Bhagawat Gita Hard Cover Book 35.00

স্বর্গের ইচ্ছা রেখে যজ্ঞদ্বারা ভগবদ্-পুজনকারী হওয়ার ফলে স্বর্গের দিব্য এবং বিশাল ভোগসমূহকে ভোগ করে ।পক্ষান্তরে বেদের মাহাত্ম্যের বর্ণনা করা হয়েছে এরূপ বহু বাক্য গীতায় রয়েছে –“কর্ম ব্রহ্মোপ্তবং বিদ্ধি ব্রহ্মাক্ষরসমুদ্ভবম্ (গীতা ৩/১৫), ‘বেদ থেকে কর্ম এবং বেদ অক্ষরপরমাত্মা থেকে উৎপন্ন হয়েছে বলে জানবে।’

ওঁ তৎসদিতি নির্দেশো ব্রহ্মণস্তিবিধঃ স্মৃতঃ । ব্রাহ্মণান্তেন বেদাশ্চ যজ্ঞাশ্চ বিহিতাঃ পুরা ।’ (গীতা ১৭/২৩), ওঁ, তৎ, সৎ এইরূপ তিন প্রকারের সচ্চিদানন্দঘন ব্রহ্মের নাম কথিত আছে, তদ্বারা সৃষ্টির আদিকালে ব্রাহ্মণ, বেদ ও যজ্ঞাদি রচিত হয়েছে।

এই কথনের দ্বারা বেদের উৎপত্তি পরমাত্মার দ্বারা হয়েছে, ইহা বলা হয়েছে। ‘এবং বহুবিধা যজ্ঞা বিততা ব্রহ্মাণো মুখে। কর্মজ্ঞান বিদ্ধি তান্ সর্বানেবং ভাতা বিমোক্ষ্যসে।” (৪/৩২) ‘এরূপ বহুবিধ যজ্ঞ বেদের বাণীতে বিস্তারিত রয়েছে, সেই সবকে শরীর, মন, এবং ইন্দ্রিয়সমূহের ক্রিয়া দ্বারা নিম্পন্ন জান। মরক্কোর তত্ত্বতঃ জেনে নিষ্কাম কর্মযোগ দ্বারা সংসার বন্ধন থেকে মুক্ত হবে।’

এখানে বৈদিক কর্মসমূহকে তত্ত্বতঃ জেনে তাঁর দ্বারা নিষ্কাম আচরণ করে মোক্ষের প্রাপ্তি ঘটবে এরূপ বলা হয়েছে। “যদক্ষরং বেদবিদো বদন্তি বিশত্তি’ (৮/১১) ‘বেদবত্তাগণ যে পরমাত্মাকে ওঁ কার নামে অভিহিত করেন।’ কাজেই এক্ষেত্রে স্পষ্টরূপে বেদের প্রশংসা করা হয়েছে।

Questions and Answers on Gita Parva 1

ঠিক এরূপ বাক্য কঠোপনিষদে নিম্নলিখিত মন্ত্রে রয়েছে- সর্বে বেদা যত্পদমামনন্তি তর্বাংসি সর্বাণি চ যদ্বদন্তি। যদিচ্ছান্তো ব্রহ্মাচর্যং চরন্তি তত্ত্বে পদং সংগ্রহেণ ব্রবীম্যোমিত্যেতৎ। (১/২/১৫)

“…….. পবিত্রমোঙ্কার ঋকসাম যজুরেব চ।” পবিত্র ও কার এবং ঋক্, সাম তথা যজুর্বেদ আমিই । । ৯/১৭) এই বচনের দ্বারা গীতার বক্তা ভগবান বেদকে নিজের স্বরূপ বলে বর্ণনা করেছেন। ‘ছন্দোভির্বিবিধৈ পৃথক্ (১৩/৪ ) ‘বিভিন্ন বেদমন্ত্রদ্বারা ( ক্ষেত্র- ক্ষত্রক্তের তত্ত্বঃ) বিভাগপূর্বক বলে দিয়ে নিজের বাক্যের সমর্থনে বেদের প্রমাণ দিয়েছেন ‘বেদৈশ সর্বৈরহমেৰ বেদ্যো বেদান্তকৃদ্ধেদবিদেৰ চাহম্।” (১৫/১৫)

সকল বেদদ্বারা আমিই জানিবার যোগ্য, বেদান্তের কর্তা এবং বেদবেত্তাও আমিই। এই বচনের দ্বারা ভগবান নিজেকে বেদ দ্বারা জানিবার এবং নিজেকে বেদের জ্ঞাতা বলে বেদকে স্পষ্টরূপে প্রতিষ্ঠা দান করেছেন। এছাড়াও আরও বিভিন্ন স্থানে ভগবান বেদের প্রশংসা করেছেন।

ফলে ইহা স্পষ্ট যে, গীতা বেদকে নীচু বলে মানে না। গীতায় শুধুমাত্র সকাম কর্মেকে নিষ্কাম কর্ম অপেক্ষা নীচু বলা হয়েছে। বাস্তবিক পক্ষে ইহলোক এবং পরলোকের সমস্ত ভোগ-পদার্থ মোক্ষ অপেক্ষা অত্যন্ত নীচু। স্বয়ং বেদও এই সিদ্ধান্ত প্রতিপাদন করে থাকে। যজুর্বেদের চার শতম অধ্যায়ে এর বিবেচন রয়েছে।

কঠেপনিষদে যম-নচিকেতার সংবাদে প্রেম-শ্রেয়র বিবেচনা করা কালীন যমরাজ ভোগ ঐশ্বর্য্যাদি এবং ভোগ ঐশ্বের্য্যে অনাসক্ত থাকার জন্য নিচকেতার যথেষ্ট প্রশংসা করেছেন। প্রেমর নিন্দা এবং মোক্ষ-শ্রেয়ের অতি প্রশংসা করেছেন। এবং ভোগ-ঐশ্বর্য্যে অনাশক্ত থাকার জন্য যথেষ্ট প্রশংসা করেছেন। (কণ্ঠ.ব. ২/১,২,৩),

গীতাতেও এইরূপ বলা হয়েছে। নিষ্কাম কর্ম, নিষ্কাম উপাসনা এবং আত্মতত্ত্বের বিভিন্ন স্থানে প্রশংসা করে গীতা প্রকান্তরে বেদেরই সমর্থন করেছে।

প্রশ্ন:- গীতা বর্ণাশ্রম-ধর্ম মান্য করে কি না? যদি মান্য করে তবে কি প্রকারে? যদি মান্য হয় তবে সকল ধর্মের পরিত্যাগ করে (গীতা ১৮/৬৬) শ্লোকের অর্থ কি?

উত্তর – গীতা বর্ণাশ্রম স্বীকার করে। ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য এবং শুদ্র যদি নিজের নিজের স্বাভাবিক বর্ণ-ধর্মে স্বার্থরহিত হয়ে নিষ্কামভাবে ভগবদ্ প্রীতির জন্য আচরণ করে, তাহলে তাদের মুক্তি হওয়াকে গীতা পুরোপুরী স্বীকার করে।

গীতার ১৮ অধ্যায়ে ৪১ থেকে ৪৪ শ্লোকে চার বর্ণের স্বাভাবিক কর্মের বর্ণনা করে ৪৫-৪৬ সংখ্যায় সেই স্বাভাবিক কর্মদ্বারা তাঁদের ক্ষেত্রে পরম প্রাপ্তি বলা হয়েছে এবং ৪৭-৪৮ শ্লোক সংখ্যায় বর্ণ-ধর্ম পালনের উপরে বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে।

গীতা জন্ম এবং কর্ম উভয় ভাবেই বর্ণ স্বীকার করে । ‘চাতুর্ববণ্যং ময়া সৃষ্টং গুণকর্মবিভাগশঃ (৪/১৩) গুণ এবং কর্ম অনুযায়ী বিভাগ করে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় বৈশ্য এবং শুদ্র আমার দ্বারা রচিত হয়েছে।” এই কথনের দ্বারা তাদের পূর্বকৃত কর্মের ফলস্বরূপ গুণ-কর্ম অনুযায়ী রচিত হওয়া সিদ্ধ হয়, জন্ম হওয়ার পরবর্ত্তিকাল থেকে মান্য হতে পারে না।

Questions and Answers on Gita Parva 1

সেইজন্য গীতা বর্ণধর্মকে “স্বাভাবিক’ এবং ‘সহজ” (জন্মের সঙ্গে উৎপন্নজাত) কর্ম বলেছে। পরমেশ্বরের শরণ হয়ে যে কেউই নিজের স্বাভাবিক কর্ম দ্বারা নিষ্কামভাব নিয়ে তাঁর উপাসনা করে মুক্ত হতে পারে।

বর্ণ অনুযায়ী কর্মভেদ স্বীকার করেও মুক্তি সম্বন্ধে গীতা সকলকে সমান অধিকারী স্বীকার করে। গীতার ঘোষণা হচ্ছে-

 যতঃ প্রবৃত্তির্ভুতানাং যেন সর্বমিদং ততম্। স্বকর্মণা তমভর্চ্য সিদ্ধিং বিন্দতি মানবঃ।। (১৮/৪৬) মাং হি পার্থ ব্যপ্যশ্রিত্য যেহপি স্যুঃ পপযোনয়ঃ স্ত্রীয় বৈশ্যান্তথা সুদ্রান্তেহপি যান্তি পরাং গতিম। কিং পুনব্রাহ্মণা পূণ্যা ভক্ত্যা রাজর্ষয়ন্তথা। অনিত্যমসুখং লোক মিমং প্রাপ্য তজস্ব মাম । (৯/৩২/৩৩)

যে পরমাত্মা হইতে সকল ভুতের উৎপত্তি হয়েছে এবং যার দ্বারা সর্ব জগৎ ব্যান্ত রয়েছে পরমেশ্বরকে স্বীয় স্বাভাবিক কর্মদ্বারা পূজা করে মনুষ্য পরম সিদ্ধি প্রাপ্ত হয়। হে অর্জুন! স্ত্রী, বৈশ্য এবং শূদ্রাদিক তথা পাপযোনি বিশিষ্ঠ যে কেউ হোক না কেন, তাঁরাও আমাকে আশ্রয় করে পরম গতি প্রাপ্ত হয়, তাহলে পূণ্যশীল ব্রাহ্মণ এবং রাজর্ষী ভক্তগণ সম্বন্ধে আর বলার কি আছে? অতএব তুমি এই ক্ষণভঙ্গুর মনুষ্য শরীর প্রাপ্ত হয়ে নিরন্তর আমাকে ভজনা করে।

সর্বধর্মান পরিত্যজ্য‘-র অর্থ গীতায় ১৮ অধ্যায়ের ৬৬ নং শ্লোকে সম্পূর্ণ ধর্মের স্বরূপতঃ ত্যাগ বলা হয়নি; কেননা এর আগের ১৬ অধ্যায়ের ২৩ এবং ২৪ নং শ্লোক সংখ্যায় শাস্ত্রবিধির ত্যাগে সিদ্ধি, সুখ এবং পরমগতির প্রাপ্তি না হওয়া বলা হয়েছে এবং শাস্ত্রবিধি অনুযায়ী ধর্ম পালন করাকে কর্তব্য বলে বলা হয়েছে।

১৮ অধ্যায়ের ৪৭ এবং ৪৮ নং শ্লোকেও স্বধর্ম পালনের উপরে খুব জোর দেওয়া হয়েছে। কাজেই পূর্বে এরূপ বলে পরে ধর্মের স্বরূপতঃ ত্যাগের আদেশ দেওয়া সম্ভব নয়। যদি ক্ষণিকের জন্য এটা মানা হয় যে, নিজের কথনের বিরুদ্ধে ভগবান এখানে স্বরূপতঃ ধর্মের পরিত্যাগের আদেশ দিয়েছেন, তাহলে ১৮ অধ্যায়ের ৭৩ নং শ্লোকে ‘করিস্যে বচনং তব”– আপনার আদেশ অনুযায়ী করব’ বলে অর্জুনের যুদ্ধরূপ বর্ণধর্মের আচরণ করা বিপরীত প্রতীত হচ্ছে। ভগবান সকল ধর্মের পরিত্যাগের আদেশ দিয়েছেন।

অর্জুন তা স্বীকারও করে নিয়েছে, তাহলে অর্জুন-এর বিপরীত যুদ্ধ কেন করবে? এতে এটাই প্রমাণিত হয় যে, ভগবান সকল ধর্মের পরিত্যাগের জন্য আদেশ দেন নি। এখানে “সর্বধর্মান পরিত্যজ্য”-র অর্থ এই যে সকল ধর্মের “আশ্রয়”-এর পরিত্যাগ করে মানুষ যেন একমাত্র পরমাত্মার আশ্রয় গ্রহণ করে।

স্বরূপতঃ ধর্ম পরিত্যাগের কথা বলা হয় নি। তাৎপর্য শুধু আশ্রয় (শরণ) পরিত্যাগের। বর্ণ-ধর্ম সম্বন্ধে ইহা বলা হয়েছে। বর্ণের ন্যায় আশ্রম ধর্মের সম্বন্ধে গীতায় স্পষ্টভাবে এবং বিশদ্ বর্ণনা দেখা যায় না।

Questions and Answers on Gita Parva 1

গৌণরূপে গীতা আশ্রম ধর্ম স্বীকার করে। “ব্রহ্মচর্য্যং চরপ্তি,” ষতয়ো বীতরাগঃ (৮/১১), ‘তপস্বিত্যঃ (৬/৪৬), “ব্রহ্মচর্যের পালন করে” “আসক্তিরহিত সন্ন্যাসী” “তপস্বীর চাইতে” প্রভৃতি শব্দদ্বারা ব্রহ্মচর্য্য, সন্ন্যাস এবং বাণপ্রস্থ আশ্রমের নির্দেশ করা হয়েছে। গৃহস্থ-ধর্মের বর্ণনা তো স্পষ্টরূপে রয়েছে।

প্রশ্নঃ- “কর্ম” এবং “জ্ঞান” এই দুইয়ের মধ্যে গীতা কোনটি স্বীকার করে? কিংবা দুটি-ই স্বীকার করে? যদি শুধু কর্ম স্বীকার করে তবে জ্ঞান নিষ্ফল হয় এবং যদি জ্ঞান স্বীকার করে তবে কর্ম নিষ্ফল হয়ে যায়; যদি জ্ঞান লক্ষ্যবস্তু হয় তবে কর্মের উপরে আগ্রহ কেন?

উত্তরঃ- অধিকারী-ভেদে গীতা জ্ঞানযোগ এবং কর্মযোগের নিষ্ঠাকে (আস্থা) মুক্তির দুইটি স্বতন্ত্র সাধন পথ বলে স্বীকার করে। এই দুই নিষ্ঠার পরিণাম একই ভগবদ্ প্রাপ্তি হলেও দুই সাধন পথের কার্যপদ্ধতি, ভাব, পথ সর্বথা ভিন্ন হয়ে থাকে। উভয় নিষ্ঠার সাধনা একই সময়ে একই ব্যক্তির দ্বারা হতে পারে না।

নিষ্কাম কর্মযোগী সাধনকালে কর্ম, কর্মফল, পরমাত্মা এবং নিজেকে ভিন্ন-ভিন্ন মনে করে, কর্মফল এবং আসক্তির পরিত্যাগ করে ঈশ্বরে প্রবৃত্ত হয়ে ঈশ্বর-অর্পণযুক্ত বুদ্ধি দ্বারা সকল কার্য করে এবং জ্ঞানযোগী মায়ার গুণই গুণে প্রবৃত্ত রয়েছে এরূপ মনে করে ইন্দ্রিয় সমূহদ্বারা ঘটিত সকল ক্রিয়ার কর্তৃত্ব-অভিমান না রেখে কেবলমাত্র এক সর্বব্যাপী পরমাত্মার স্বরূপে এককভাবে যুক্ত হয়ে অবস্থান করে।

দুইয়ের মধ্যে যে কোনও নিষ্ঠায় স্বরূপতঃ কর্মত্যাগ করা আবশ্যক নয় । উপাসনার আবশ্যকতা উভয় নিষ্ঠায় রয়েছে। এই বিষয়ের বিস্তৃত বর্ণনা “গীতোক্ত সন্ন্যাস”-এর “গীতোক্ত নিষ্কাম কর্মযোগের স্বরূপ’ শীর্ষক প্রবন্ধে বলা হয়েছে।

Questions and Answers on Gita Parva 1

প্রশ্নঃ- গীতা মুর্তি পুজা স্বীকার করে কি না? যদি স্বীকার না করে তবে নবম অধ্যায়ের ২৬ নং শ্লোকের অর্থ কি? যদি স্বীকার করে তবে তাঁর স্বরূপ কি, সাকার না নিরাকার?

এই প্রশ্নের উত্তর এবং আরও অন্যান্য় প্রশ্নের উত্তর নিয়ে আলোচনা হবে দ্বিতীয় পর্বে। আপনি আমাদের এই সব  সোসাল মিডিয়ায়  GNews, Facebook,  What’s App এবং Telegram – যুক্ত হয়ে থাকুন। Google Play Store এও আমাদের উপলব্ধ রয়েছে Bharatsastra App

শ্রীমদ ভাগবত গীতা বই টি কিনতে পারেন আমাদের ওয়েবসাইট অথবা অ্যাপ থেকে। দাম মাত্র 35.00। গীতা পুস্তকটি কেনার জন্য এখানে ক্লিক করুন

আপনি গীতা (Gita) সম্বন্ধে আপনার প্রশ্ন রাখতে পারেন। তারজন্য আপনি নিচে কমেন্ট করতে পারেন।

 

WhatsApp Channel Join Now
Telegram Channel Join Now

Leave a Comment