মূলা ষষ্ঠীর ব্রত

মূলা ষষ্ঠীর ব্রত

মূলা ষষ্ঠীর ব্রত এর সঠিক সময় বা কাল–অগ্রহায়ণ মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠীর দিন স্ত্রীলোকেরা উপোস করে থেকে এই ব্রত করতে পারে।

মূলা ষষ্ঠী ব্রতের দ্রব্য ও বিধান—মূলো, কলা, পান আর ময়দা। এই ব্রতের বিধান অনুসারেসেদিন উপোস করে থেকে মা ষষ্ঠীর পুজো করতে হয়। সেই দিন মাছ ও মাংস খাওয়া একেবারে বারণ। রুটি আর মূলোর তরকারী খাওয়াই ব্রতের বিধান।

মূলা ষষ্ঠী ব্রতের ব্রতকথা—এক খুব গরীব ব্রাহ্মণ ছিল। সে ছেলে বৌ নিয়ে কোনো রকমে এক বেলা এক পেটা খেয়ে দিন কাটাতো। একবার তার একটু মাংস খাবার খুব ইচ্ছে হল।

বেচারা অনেক কষ্টে কিছু পয়সা যোগাড় করে আধপোয়া মাংসা এনে তার ছেলের বৌকে রান্না করতে বলল। ছেলের বৌকে মাংসটুকু রাধবার কথা বলে দিয়ে ব্রাহ্মণ নিজের কাজে বেরিয়ে

গেল। এদিকে তার ছেলের বৌ শ্বশুরের অনেক কষ্টে যোগাড় করা মাংসটুকু খুব ভালো করে রান্না করল। সেই সময় বৌয়ের কাছে একজন প্রতিবেশী বসেছিল।

বৌ সেই প্রতিবেশীকে একটু মাংস খেতে দিয়ে বলল, “দ্যাখতো খেতে কেমন হয়েছে?” প্রতিবেশী মাংসটুটু খেয়ে বলল, “একটুখানি মাংস তো, খেয়ে কোনো স্বাদই বুঝতে পারা গেল না।” বৌ তখন তাকে আরও একটু মাংস দিল, কিন্তু প্রতিবেশী সেবারও একই কথা বলল।

বৌ তখন তাকে আরও একটু মাংস চাখতে দিয়ে দেখল, এমনি করে সব মাংসই ফুরিয়ে গেছে। এদিকে শ্বশুর শিগ্‌গিরই স্নান করে খেতে আসবেন, তখন সে কী করবে সেই কথা ভেবে বৌ অস্থির হয়ে উঠল।

শেষে কোনো রকমে রক্ষে পাবার জন্যে প্রতিবেশীকে বলল, “এই নাও আটআনা পয়সা, যত শিগ্‌গির পার আমাকে আধপোয়া মাংস এনে দাও, আমি তাড়াতাড়ি রেঁধে রাখি, আমার শ্বশুর হয়ত এখুনি এসে পড়বেন।”

প্রতিবেশী পয়সা নিয়ে মাংস আনবার জন্যে বেরুলো, সে একটু দূরে গিয়েই দেখল যে, একটা বাছুর মরে পড়ে আছে। সে সঙ্গে সঙ্গে পয়সাগুলো নিজের আঁচলে বেঁধে নিয়ে সেই বাছুরের দেহ থেকে আধপোয়াটাক মাংস কেটে এনে বৌকে দিল।

কিন্তু এমন আশ্চর্য্য যে—অনেকটা সময় কেটে গেলেও মাংস কিন্তু একটুও সেদ্ধ হল না! বৌয়ের তখন ভয়ানক ভয় হল। সে শুনতে পেল যে, শ্বশুর ভাত খেতে আসছেন, সে আর সহ্য করতে পারল না, ভয়ে ভাবনায় অজ্ঞান হয়ে গেল। মাংস আর ঝোল ছড়িয়ে পড়ে রইল চতুর্দিকে।

শ্বশুর ও স্বামী জানতে পেরে অচৈতন্য বৌকে তাড়াতাড়ি ঘরে তুলে নিয়ে গেলেন। বৌয়ের জ্ঞান হতে সে ভয়ে ভয়ে কাঁদতে কাঁদতে তার স্বামীকে সব কথা বলল। তার স্বামী তখন প্রতিবেশীকে গিয়ে ধরল।

সে তাকে বলল, “মাংস সেদ্ধ হল না কেন, চলো তো দেখি কোথা থেকে মাংস এনেছ।” প্রতিবেশী তখন আর কোনো উপায় না দেখে আসল কথা স্বীকার করল। সেদিন ছিল অগ্রহায়ণ মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী তিথি।

বৌ তাড়াতাড়ি মা ষষ্ঠীর পুজো করে মরা বাছুরের ওপর সব ফল, জল ছিটিয়ে দিল আর বাছুরও সঙ্গে সঙ্গে বেঁচে উঠল।

এই ঘটনা দেখে সকলে বৌয়ের খুব প্রশংসা করতে লাগল। সেই সময় হঠাৎ দৈববাণী হল—“মাসের শুক্লা ষষ্ঠীর দিন মাছ মাংস খেলে গোমাংস খাওয়া হয়, আর সে পাপের কোনো রকমেই খণ্ডন নেই।

এই ষষ্ঠীর দিনে যে মাছ-মাংসের বদলে মুলোর তরকারী দিয়ে রুটি খাবে তার অক্ষয় পূণ্য সঞ্চয় হবে। সেই থেকে এই ষষ্ঠীর নাম হল “মূলাষষ্ঠী”।

মূলা ষষ্ঠী ব্রতের ফল—এই ব্রত পালন করলে সংসারে ছেলে-মেয়ের কোনো রোগ হয় না,তারা নীরোগ হয়ে সংসারে বাস করে।

 

পড়ুন  – অগ্রহায়ণ মাসের ব্রতকথাগুলি

ভারতশাস্ত্র এর সমস্ত আপডেট এখন টেলিগ্রামে পেয়ে যাবেন (Join Telegram)

 

 

Leave a Comment